যশোরের চৌগাছা সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক ভারতীয় তরুণীকে ফেরত পাঠিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে প্রিয়া সরকার (১৯) নামে ওই তরুণীকে ফেরত পাঠানো হয়। এ ঘটনায় আটক অপর সাত বাংলাদেশিকে চৌগাছা থানায় সোপর্দ করা হয়। গতকাল রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান ৪৯ বিজিবি যশোরের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর আবুল হাসান তৌফিক মাহমুদ।
স্থানীয় বিজিবি ও থানা সূত্র জানায়, ভারতীয় নাগরিক প্রিয়া কর্মকারকে দেশে ফেরত পাঠানো হলেও তার প্রেমিক বাংলাদেশি নাগরিক সৌরভ সরকারকে (২৫) থানায় সোপর্দ করেছে বিজিবি। প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে ওই তরুণী সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন। সৌরভ যশোরের শার্শার কানাইনগর গ্রামের শংকর সরকারের ছেলে।
বিজিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে চৌগাছা সীমান্তের হিজলী বিওপির টহলদল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভারতীয় নাগরিকসহ পাচারকারী দলের সদস্যকে আটক করে। ভারতীয় নাগরিক প্রিয়া কর্মকার (১৯) উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁও থানার টেংরাইল গ্রামের বাসিন্দা।
পরবর্তীতে গতকাল শুক্রবার বিকেলে অবৈধভাবে আগমনকারী ভারতীয় নাগরিককে কোম্পানী কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ১০৭ বিএসএফের উত্তর বয়রা কোম্পানী সদরের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। একইসঙ্গে অবৈধ অনুপ্রবেশের সহায়তাকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের চৌগাছা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রিয়া সরকার ভারতের টেংরাইল গ্রামের বাসিন্দা। তারা এক ভাই এক বোন। ভাই ভারতীয় সেনা সদস্য। আত্মীয়তার সূত্রে বাংলাদেশের শার্শা উপজেলার সৌরভ সরকার ও প্রিয়া সরকারের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্পর্কের সূত্র ধরে প্রিয়া গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বাংলাদেশের সীমানায় চলে আসেন।
গোপন সংবাদে বিজিবি তাকেসহ তার প্রেমিক এবং ৬ বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করে। আটকের পরে ভারতীয় নাগরিক প্রিয়া সরকারকে প্রথমে স্থানীয় ইউপি সদস্য শিমুল হোসেনের জিম্মায় রাখা হয়। পরে বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাকে ভারতে তার স্বজনদের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে জানান ইউপি সদস্য শিমুল হোসেন।
হিজলি বিজিবির দাবি, আটককৃতরা অবৈধভাবে ভারত প্রবেশের চেষ্টা করছিল। আটককৃতদের আদালতে পাঠানোর জন্য চৌগাছা থানায় সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানান আন্দুলিয়া বিজিবি ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার নজরুল ইসলাম।
প্রেমিক সৌরভ সরকারের চাচাতো ভাই অরবিন্দ বলেন, ‘ভারতের টেংরাইল গ্রামে সৌরভের আত্মীয় রয়েছে। সেখানে যাতায়াতের মাধ্যমে প্রিয়ার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়। এর পরে ফোনে কথা চলে তাদর। হঠাৎই কাউকে কিছু না জানিয়ে মেয়েটি বাংলাদেশে এসে সৌরভের কাছে ফোন দেয় এবং বলে তাকে না নিয়ে গেলে সে এখানেই আত্মহত্যা করবে। সে কারণেই আমার ভাই এখানে এসেছিল।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় আসলেই তো আর কেউ অবৈধ হয় না। ভারতীয় মেয়েটাকে ফেরত দেওয়া হলো। কিন্তু আমার ভাইকে জেলখানায় যেতে হলো এ কেমন বিচার?’
ফেরত পাঠানো প্রিয়া সরকার বলেন, ‘আমি আমার বাবার কাছে অনুমতি নিয়েই এসেছি। আমি বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। আমার বুঝ শক্তি হয়েছে। আমাকে ফেরত দিলে আমি আত্মহত্যা করব।’
এ বিষয়ে চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, ‘বিজিবির করা পাসপোর্ট আইনের মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আজ শনিবার তাদের আদালতে পাঠানো হবে। আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন তাদের বাড়িতে নাকি জেলহাজতে পাঠানো হবে।’
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: