অস্ট্রেলিয়ার সিডনি হারবারের আদলে ময়মনসিংহে নির্মাণ করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন স্টিল আর্চ ব্রিজ। ব্রহ্মপুত্র নদের উপর নির্মিত দেশের প্রথম স্টিল আর্চ ব্রিজটিতে থাকবে না কোনো পিলার। নদের দুই পাশে থাকবে দুটি পিআর। দুটি পিআরের উপর বসবে ১শ ৮০ মিটারের একমাত্র স্প্যানটি। এ জন্য এ ব্রিজটি হবে দেশের প্রথম দর্শনীয় মডেল ব্রিজ। এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) ঋণ ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) ‘কেওয়াটখালি সেতু নির্মাণ’ নামে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৬৩ কোটি ৬৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা। প্রকল্পে চীনের এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) ঋণ হিসেবে দেবে ১ হাজার ৯৩০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
নগরীর পাটগুদাম ব্রীজ মোড়ের যানজট নিরসনের লক্ষ্যে এবং শম্ভুগঞ্জ সেতুর উপর যান চলাচলের চাপ কমাতে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর এই সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এমন দৃষ্টিনন্দন স্টিল আর্চ ব্রিজ নির্মানের খবরে খুশি স্থানীয়রাও।
পরিকল্পনা কমিশনের বরাদ দিয়ে ময়মনসিংহ সড়ক বিভাগ জানায়, ৩২০ মিটার ধনুক আকৃতির এই স্টিল আর্চ ব্রিজ সুপার স্ট্রাকচার নির্মাণে ব্যয় হবে ৪০৭ কোটি ৪০ লাখ ৩০ হাজার টাকা। চার লেনের সড়ক নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৩২ কোটি টাকা। ২.০৯৩ কিলোমিটার ব্রিজ ফাউন্ডেশন ও সাবস্ট্রাকচারের পেছনে ব্যয় হবে ৪৮৯ কোটি ৭৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। কংক্রিট ব্রিজ ও কালভার্টে ৭২৭ কোটি ৪৬ লাখ ৯১ হাজার টাকা। সড়ক বাঁধে ১৪.৬৫ লাখ ঘন মিটার মাটির কাজে বরাদ্দ রয়েছে ৭৩ কোটি ৮৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা। আর ৬.২ কিলোমিটার চার লেনের সড়ক নির্মাণে ব্যয় হবে ১৯৭ কোটি ৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।
প্রকল্প এলাকায় ৩৩.০২ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৭৪ কোটি ৭৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। সেতু নির্মানে পরামর্শক সেবার ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় ৩৩ দশমিক ২ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ৪৫৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা এবং পুনর্বাসনের জন্য ৯০ কোটি ৭ লাখ টাকা প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ প্রাক্কলিত ব্যয়ের ভিত্তি এবং পুনর্বাসন ব্যয়ের পরিকল্পনা ডিপিপিতে সংযুক্ত করা হয়নি।
এছাড়া এই প্রকল্পের অধীনে একটি টোলপ্লাজা, একটি ৫৫১ মিটার দৈর্ঘ্যরে ওভারপাস সড়ক, ২৪০ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি রেলওয়ে ওভারপাস ও সেতু রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হবে। সেতু এবং সংযোগ সড়কটি হবে চার লেনের। সেতু নির্মাণের প্রাথমিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে বর্তমানে নির্মিত সেতুর উপর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৩ হাজার ২শ যানবাহন চলাচল করে।
সেতু নির্মাণের সময়কাল ধরা হয়েছে ৪ বছর। আগামী ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করবে সড়ক বিভাগ। সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হলে ময়মনসিংহের সাথে শেরপুর, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মনবাড়িয়া, সিলেট, চট্টগ্রাম ছাড়াও জেলার ৭টি উপজেলার যোগাযোগে সুবিধা বাড়বে এবং রাজধানী ঢাকার সাথে নাকুগাঁও এবং হালুয়াঘাট স্থলবন্দরের বানিজ্য বৃদ্ধি পাবে।
ব্রহ্মপুত্র নদের উপর আরেকটি দৃষ্টিনন্দন সেতু নির্মাণের খবরে উৎফুল্ল স্থানীয়রা। সবুজ মিয়া নামে স্থানীয় এক ব্যাক্তি বলেন, আমরাা সিটির বাসিন্ধা হলেও নগরীতে প্রবেশের মুখে যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সেতুটি নির্মাণ হলে যানজটের ভোগান্তি থেকে মুক্তি মিলবে।
মিজানুর রহমান নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, এরকম একটি সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হলে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ব্যবসা-বানিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাবে, সাধারণ জনগণের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং সেতুকে কেন্দ্র করে পর্যটন খাত প্রসার লাভ করবে।
ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, এধরনের ‘আর্চ’ প্রকৃতির একটি সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে নতুন উচ্চতায় প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সেতু নির্মাণের জন্য আগামী অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করা হবে এবং যথাসময়ের মধ্যেই নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: