বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৯ বার হত্যা চেষ্টার কথা জানা গেছে। এর মধ্যে ১৪টি ঘটনায় মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কেবল দুটি মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে। আর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় বিচারিক আদালতে ঘোষণা হলেও উচ্চ আদালতে রয়েছে আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির অপেক্ষায়। শেখ হাসিনাকে যতবার হত্যাচেষ্টা করা হয়েছিল এসব অনেক ঘটনায় মামলাও হয়নি। এমনকি হামলার পর উল্টো আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার নজিরও আছে।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি থাকাকালে দুটি, ১৯৯১ থেকে ’৯৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি সরকারের আমলে চারটি, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে চারটি, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে চারটি, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে একটি এবং আওয়ামী লীগের বর্তমান আমলে চারটি হত্যা চেষ্টার কথা জানা যায়।
শেখ হাসিনার ওপর হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ৬০ জন দলীয় নেতাকর্মী নিহত হওয়ার হিসাব আছে। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার প্রথম কিংবা শেষ চেষ্টা নয়।
১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরার পর থেকেই স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। সে বছরই তার ওপর হামলা চালায় বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সংগঠন ফ্রিডম পার্টির সন্ত্রাসীরা।
১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি লালদীঘি ময়দানে ৮ দলীয় জোটের সমাবেশে যোগ দিতে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে যাওয়ার পথে ট্রাক মিছিলে সশস্ত্র হামলা হয়। এতে সাতজন নিহত হন। আহত হন ৩০০ জন। পরদিন জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয় শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে গুলি করেছিল পুলিশ ও বিডিআর।
পরের বছর ১১ আগস্ট আবারও বঙ্গবন্ধুর খুনি ফারুক-রশিদের ফ্রিডম পার্টির সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলা। শেখ হাসিনা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে আছেন তা নিশ্চিত হয়ে রাত ১২টার দিকে ৭-৮ মিনিট ধরে গুলি চালায় সন্ত্রাসীরা। একটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করলেও তা বিস্ফোরিত হয়নি।
১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর গ্রিন রোডে একটি কেন্দ্রে ভোটের পরিস্থিতি দেখতে যান শেখ হাসিনা। গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই ২০-২৫ রাউন্ড গুলি ও বোমাবর্ষণ করা হয়। দৈনিক ইত্তেফাকে লেখা হয় বিএনপির ওয়াহিদের নেতৃত্বে দলটির কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছিল।
১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ইশ্বরদী ও নাটোর রেলস্টেশনের প্রবেশমুখে শেখ হাসিনাকে বহনকারী রেলগাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে সন্ত্রাসীরা।
১৯৯৫ সালের ৭ ডিসেম্বর রাসেল স্কয়ারের কাছে সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়।
১৯৯৬ সালের ৭ মার্চ সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে আওয়ামী লীগের সমাবেশে শেখ হাসিনা বক্তৃতা শেষ করেছেন মাত্র। হঠাৎ একটি মাইক্রোবাস থেকে সভামঞ্চ লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে ২০ জন আহত হন।
২০০০ সালের ২০ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান ডিগ্রি কলেজ মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভার প্রস্তুতি চলছে। হেলিপ্যাডের কাছে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা ধরা পড়ে গোয়েন্দাদের কাছে।
২০০১ সালের ৩০ মে খুলনার রূপসা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করে হুজি-বি। তিন দিন আগে সেতুর কাছাকাছি রূপসা নদী থেকে দুটি ইঞ্জিনের নৌকা থেকে ১৫ জঙ্গি ধরা পড়লে সেটি আর সফল হয়নি।
২০০১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সিলেটে নির্বাচনী জনসভায় শেখ হাসিনাকে হুজি-বি বোমা পেতে মারার পরিকল্পনা করে। সভাস্থলের ৫০০ গজ দূরে একটি বাড়িতে বোমা বিস্ফোরিত হয়ে জঙ্গিদের দুজন নিহত হলে চক্রান্ত ভেস্তে যায়।
২০০২ সালের ৪ মার্চ যুবদল ক্যাডার খালিদ বিন হেদায়েত নওগাঁয় বিএমসি সরকারি মহিলা কলেজের সামনে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের তৎকালীন নেতা শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা চালায়।
২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সাতক্ষীরার কলারোয়ায় রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে শেখ হাসিনার ওপর হামলা চালানো হয়। পত্রপত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষমতাসীন জোটের এমপির প্রত্যক্ষ মদদে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা চালায় বিএনপি-জামায়াত জোট সন্ত্রাসীরা।
২০০৪ সালের ২ এপ্রিল বরিশালের গৌরনদীতে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে গুলিবর্ষণ করে বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসীরা।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো সবচেয়ে বড় গ্রেনডে হামলায় ২৪ জন নিহত এবং ৪০০ জন আহত হন। এসব হামলা ছাড়াও শেখ হাসিনাকে হত্যার বেশ কয়েকটি ষড়যন্ত্রের কথা জানা যায়।
১৯৯৯ সালের ১২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের ৩১ জনকে হত্যার জন্য পুরষ্কার ঘোষণার একটি ইমেইল ফাঁস হয়। ইমেইল প্রেরণকারী ইন্টার এশিয়া টিভির মালিক শোয়েব চৌধুরীর বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা করা হয়।
২০০৭ সালের ১৬ জুলাই সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে। জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ সাব-জেলে তাকে স্লো পয়জনিংয়ের মাধ্যমে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়।
২০১১ সালে শ্রীলংকার একটি সন্ত্রাসবাদী দলের সাথে বাংলাদেশের শত্রু রাষ্ট্র পাকিস্তান এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্র সুইসাইড স্কোয়াড গঠন করে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য চুক্তি করে। এজন্য অগ্রিম টাকাও দেয়া হয়। শ্রীলংকার সেই সন্ত্রাসবাদী দলের আততায়ীদের টিম গাড়ি করে কলকাতা বিমানবন্দরে যাবার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলে ভেস্তে যায় শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনাটি।
২০১৪ সালের শেষদিকে প্রশিক্ষিত নারী জঙ্গিদের মাধ্যমে মানববোমায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ১৫০ জন নারী ও ১৫০ জন যুবককে বিশেষ প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। এদের নেতৃত্বে রয়েছে ১৩ জঙ্গি দম্পতি। তবে প্রশিক্ষণরত অবস্থায়ই পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলে ওই ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যায়।
২০১৫ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে কারওয়ানবাজার এলাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে বোমা হামলার চেষ্টা চালায় জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্যরা। কয়েকটি বোমার বিস্ফোরণও ঘটায় তারা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: