লকডাউনে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু রাখার দাবি

সময় ট্রিবিউন | ১৫ এপ্রিল ২০২১, ০১:২২

ছবিঃ ইন্টারনেট

বাংলাদেশে বুধবার থেকে শুরু হওয়া লকডাউনের সময় বিদেশগামী ফ্লাইট চালু রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)।

সোমবার বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এক সপ্তাহের জন্য সকল যাত্রীবাহী আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের আনাগোনা নিষিদ্ধ করেছিল যা আজ (বুধবার) থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।

কিন্তু জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রা আর ট্রাভেল এজেন্টদের সংগঠন আটাব বলছে কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে অন্তত ২৮ হাজার বিদেশগামী শ্রমিক দুর্ভোগে পড়বে এবং তাদের অনেকের জন্য চাকুরি হারানোর পরিস্থিতি তৈরি হবে।

বাংলাদেশে গত পাঁচই এপ্রিল থেকে দেশব্যাপী সাতদিনের যে লকডাউন ঘোষণা করা হয়, তখন থেকেই অভ্যন্তরীণ সব রুটে বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে।কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠেছে যে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ রাখলে সেটি করোনা সংক্রমণের গতি রোধে ভূমিকা রাখবে কি-না।

কারণ ইতালি ও যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশে যখন সংক্রমণ ব্যাপক মাত্রায় বাড়ছিল, তখনো সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ করেনি বাংলাদেশ। শুধু নির্দিষ্ট কিছু রুটে গত বছর বিমান চলাচল বন্ধ করা হয়েছিল।সে সময় অনেকেই যারা এসেছেন, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনেও ঠিক মতো রাখা হয়নি বলে জানা যায়। বরং হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকার সময় কেউ কেউ বিয়ে করেছেন এমন খবরও এসেছিল গণমাধ্যমে।আবার বিদেশ থেকে আসা অনেকেরই হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা থাকলেও সেটি হয়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক বেনজির আহমেদ বলছেন, "এটা ঠিক যে আমরা আগে সময়মত বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারিনি। তাদের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা যায়নি।তারপরেও বিশ্বে এখন ভাইরাসটির অনেক ভ্যারিয়ান্ট দেখা যাচ্ছে। আবার ভারতসহ অনেক দেশেই সংক্রমণ ব্যাপক হারে বাড়ছে। সেক্ষেত্রে নতুন আর কোন ভ্যারিয়ান্ট (বাংলাদেশে) আসতে পারবে না বা আক্রান্ত কেউ আসতে পারবে না। এটুকু অন্তত লাভ হবে"।

আরেকজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন বলছেন "বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার নির্দেশনায় নাগরিক ও মালামাল পরিবহনে অনাবশ্যক কোন বাধা যেন তৈরি না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছে।কিন্তু এখন সুনামির গতিতে সংক্রমণ বাড়ছে। চলাচল বন্ধ হলে সেটি তো বাধাগ্রস্ত হবেই। তাই সরকার হয়তো ভাবছে ঝুঁকি কমিয়ে আনতে এটা ভূমিকা রাখবে। তবে সরকারকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধের সিদ্ধান্ত জাস্টিফাই করতে হবে"।

তিনি বলছেন,"মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ যাতে কমিয়ে আনা যায় সেজন্য হয়ত ঢালাও কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে, তবে বিমানবন্দর ব্যবস্থাপনার মধ্যে শুরু থেকেই কার্যকর ব্যবস্থা থাকা উচিত ছিল।নানা দেশ থেকে লোকজন এসেছে ও তাদের মাধ্যমেই সংক্রমণ বেড়েছে। তাদের ব্যবস্থাপনা ঠিক মতো হয়নি। বা সেটি ঠিক ভাবে তখন দেখা যায়নি। তবে এখন হয়তো সংক্রমণ ঢালাওভাবে বাড়ছে বলেই এই পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার,"।

অন্যদিকে আটাবের সভাপতি মনসুর আহমেদ বলছেন, "সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ঢালাওভাবে বন্ধ থাকলে অভিবাসী শ্রমিকদের চাকরি ঝুঁকিতে পড়বে।এই এক সপ্তাহে যাদের যাবার কথা, সময়মত যেতে না পারলে তাদের অনেকেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। আবার অনেকের আকামার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। অনেকে পরে গিয়ে আর চাকুরিতে ফিরতে পারবেন না।"

ফ্লাইট বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন,"যাত্রীরা কোভিড-১৯ টেস্ট করে যাবে এবং বিমানবন্দরে পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। কিন্তু সেটি করার বদলে ঢালাওভাবে ফ্লাইট বন্ধ করে শ্রমিকদের ফেরাকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।"

"লকডাউনে গার্মেন্ট কলকারখানা খোলা থাকবে, অবকাঠামো নির্মাণ চলবে, ব্যাংক খোলা থাকবে- তাহলে বিদেশে গিয়ে কাজ করেন এমন শ্রমিকরা কী অপরাধ করলো? এক সপ্তাহ পর তো আবার টিকেট সংকট দেখা দেবে। ফ্লাইট চালু হলেও তো অনেকে যেতে পারবে না," বলছিলেন মি. আহমেদ।

প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার প্রবাসী শ্রমিক ঢাকা থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গিয়ে থাকেন।সময়মত যেতে না পারলে প্রবাসী শ্রমিকদের অনেকে কাজ হারাবেন বলে বলছে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো।

ওদিকে বায়রা এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে ভারত, পাকিস্তান ও নেপালসহ অনেক দেশই জরুরি খাত হিসেবে শ্রমিকদের বিদেশে পাঠাচ্ছে। তারা মনে করেন এ অবস্থায় বাংলাদেশ এটি বন্ধ করলে শ্রমবাজার প্রতিযোগিতায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশই।

তবে গত বছর বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ২২শে মার্চ থেকে দশটি রুটের বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।প্রথমে ১০ দিনের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলেও পরবর্তীতে সেটা কয়েক দফা বাড়িয়ে দুই মাস পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বিমান যোগাযোগ বন্ধ থাকে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


জনপ্রিয় খবর