মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে একটি স্বার্থান্বেষী মহল দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রামকে ছোট করার অপচেষ্টা করেছে।
তিনি বলেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে একটি মিথ্যা প্রচারণা চালানো হয়েছে।
শনিবার রাতে একটি ওয়েবিনারে বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, ২৭ মার্চ জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেছেন।
বঙ্গবন্ধুর ২৪ বছরের সংগ্রামের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রায় ১৪ বছর কারাগারে ছিলেন। তিনি ধীরে ধীরে বিভিন্ন আন্দোলন ও কর্মসূচির মাধ্যমে দেশে মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছেন। জিয়াকে স্বাধীনতা ঘোষণা দেয়ার অধিকার কে দিয়েছে? জনগণ ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে ভোট দেয়ার মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার অধিকার ও ম্যান্ডেট শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুকে দিয়েছিল।
রাতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিআইডিএ) এবং বেটার বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন (বিবিএফ) যৌথভাবে ‘বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ এবং তরুণ প্রজন্ম’ শীর্ষক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বিবিএফ’ র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাসুদা খান ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন।
মোজাম্মেল হক বলেন, বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু সমার্থক হয়ে উঠেছে - মানুষের এক অভিন্ন প্রতীক। তিনি শৈশব থেকেই মানুষের সেবা করেছেন। যেদিন পাকিস্তানিরা দেশের ৫৬ শতাংশ মানুষের মাতৃভাষা বাংলাকে অস্বীকার করেছিল, সেদিনই তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিব বুঝতে পেরেছিলেন যে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি পেলেও আমরা পাঞ্জাবী শোষক পেয়েছি।
তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করার চিন্তা করেন।
মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে।
তিনি বলেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুকে দেশকে নেতৃত্ব দেয়ার ম্যান্ডেট দিয়েছে। এরপর তিনি দেশকে প্রস্তুত করেন এবং অবশেষে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। জনগণ তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে যুদ্ধে যোগ দেয় এবং নয় মাসব্যাপী যুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করে।’
মোজাম্মেল তরুণ প্রজন্মকে দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও লক্ষ্যগুলো জানতে এবং ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত 'সোনার বাংলা' গড়ার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তার যোগ্য নেতৃত্বে তরুণ প্রজন্মকে দেশ স্বাধীন করতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের গড় বয়স ছিল ২১-২২ বছর এবং তাদের মধ্যে ৭৮ শতাংশ ছিল কৃষকের সন্তান।’
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সারা জীবন তরুণ প্রজন্মের কল্যাণের কথা ভেবেছেন। তারুণ্যের প্রতি তার দারুণ সহানুভূতি ছিল। তিনি ছিলেন এমন নেতা যিনি তরুণদের মধ্যে শক্তি সঞ্চারিত করতে পারতেন।
ড. আতিউর বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলাদেশের প্রাণ এবং এই প্রাণটি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিল। হত্যাকারীরা ভেবেছিল বঙ্গবন্ধুর নাম তার হত্যার মাধ্যমে মুছে যাবে। কিন্তু তিনি আমাদের অন্তরে খুব দৃঢ়ভাবে ফিরে এসেছেন এবং সব সময় আমাদের অন্তরে থাকবেন। বঙ্গবন্ধু একটি চিরন্তন নাম যা সর্বদা উজ্জ্বল থাকবে।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখন দেশের কর্মশক্তির দক্ষতা উন্নয়নে মনোযোগ দিতে হবে।’
জর্ডানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান বলেন, বঙ্গবন্ধু জনগণের অধিকারের বিষয়ে সক্রিয় ছিলেন এবং ছাত্রজীবন থেকেই তিনি তার নেতৃত্বের গুণ দেখিয়েছেন। তিনি দেশকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে ধীরে ধীরে দেশকে স্বাধীনতার দিকে নিয়ে যান।
তিনি বলেন, আমি তরুণ প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানতে এবং দেশকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে অনুপ্রাণিত হওয়ার আহ্বান জানাই।’
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: