করোনাভাইরাস অনেকের অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেকে। করোনার প্রকোপে এক বছরের বেশি সময় ধরে হিমশিম খাচ্ছেন খেটে খাওয়া মানুষ। লকডাউনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন রাইড শেয়ারিংয়ে যুক্ত চালকরা। সরকারি বিধিনিষেধে তাদের উপার্জনের পথ এখন বন্ধ। তবু অনেকে পেটের তাগিদে লুকোচুরি করে 'খ্যাপ (চুক্তিতে ভাড়া)' খাটছেন।
রাজধানীর হাতিরঝিলের মধুবাগ ব্রিজের কাছে গতকাল সকালে অপেক্ষমাণ দেখা যায় কয়েকজন মোটরসাইকেল চালককে। তাদের একজন সাইফুল ইসলাম। এক বছর আগে ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করতেন। করোনা মহামারির কারণে ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসায় ধস নামে। তিনি বেকার হয়ে পড়েন। পরিচিতজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে একটি বাইক কিনেছেন। পাঠাও, উবার, সহজসহ বিভিন্ন অ্যাপভিত্তিক সেবার মাধ্যমে বাইক চালিয়ে কোনোরকম উপার্জন করছিলেন তিনি। সারাদিনে কঠোর পরিশ্রম করে যে উপার্জন হতো, তাতে পুরো পরিবার নিয়ে মোটামুটিভাবে চলে যেত। কিন্তু লকডাউনে অ্যাপভিত্তিক সেবা বন্ধ করায় তার দিন আর চলছে না। তাই খ্যাপে ভাড়া টানছেন।
সাইফুল বলেন, এতে একদিকে জীবনের ঝুঁকি, অন্যদিকে পুলিশি ঝামেলা। প্রায়ই রাস্তায় পুলিশ ধরছে। তাই সোজা রাস্তায় না গিয়ে বিভিন্ন অলিগলি দিয়ে যাত্রী বহন করতে হচ্ছে। এতে তেল খরচ যেমন বাড়ছে, তেমনি সময়ও বেশি লাগছে।
ইসমাইল নামের একজন জানান, মোটরবাইকে দু'জন দেখলেই মামলা দিচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। এ অবস্থায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক সিগন্যালগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন।
কাকরাইল সিগন্যালে অপেক্ষমাণ মোটরসাইকেল চালক হিমেল জানান, তিনি পাঁচ বছর পর সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন। করোনার কারণে আর সেখানে ফিরতে পারেননি। তাই বাধ্য হয়ে মোটরবাইকের পেশা বেছে নিয়েছেন। কিন্তু এখন যেভাবে শুরু হয়েছে, তাতে এ পেশায় তার জীবন চলবে না। এরপরও নতুন কিছু না পাওয়া পর্যন্ত এ পেশায় থাকতে হবে।
অনেক যাত্রীর কাছে এসব মোটরবাইকের বিরুদ্ধে বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে আল আমিন নামের এক মোটরবাইক চালক বলেন, মানুষের চলাচল কম, ট্রিপও কম, বেশি ভাড়া না নিলে পোষায় না। বিশেষ করে যেসব জায়গায় যাত্রী নেওয়ার পর ফিরতি যাত্রী পাওয়া যায় না, সেসব জায়গায় বেশি ভাড়া চাওয়া হয়। তাদের অ্যাপ চালু থাকলে অনেক বেশি যাত্রী পাওয়া যায়, আবার অ্যাপভিত্তিক বোনাস পাওয়া যায়। সবমিলিয়ে তাদের পুষিয়ে যায়।
রাজধানী ঢাকায় অ্যাপের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহন (রাইড শেয়ারিং) করছে প্রায় দেড় লাখ মোটরসাইকেল ও কার। গত ৩১ মার্চ বিআরটিএর উপপরিচালক (প্রকৌশল শাখা) বিমলেন্দু চাকমার সই করা এক অফিস আদেশে দুই সপ্তাহের জন্য মোটরসাইকেলের রাইড শেয়ারিং সার্ভিস বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।
রাজধানীতে মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন উবার-পাঠাও চালকরা।
পাঠাওয়ের মার্কেটিং ডিরেক্টর সৈয়দা নাদিলা মাহবুব বলেন, স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী সাধারণ গণপরিবহনে চড়তে যে ঝুঁকি আছে, রাইড শেয়ারিংয়ে তা অনেক কম। তবু এখন করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে পার্সেল ডেলিভারি সেবা 'কানেক্ট' ছাড়া সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: