নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় অগ্নিকাণ্ডে বিধ্বস্ত হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানা থেকে শুক্রবার দুপুরে ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উদ্ধারকর্মীরা। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা ৫২ জনে দাঁড়াল। গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে এই জুস কারখানার ছয়তলা ভবনের নিচতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানা গেছে।
কি কারণে এই কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ভয়াবহ আকার ধারণ করলো এবং র ঘটনার আদ্যয়ান্ত জানাতে তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তবে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কর্ণগোপ এলাকার হাসেম ফুড লিমিটেডের ছয়তলা ভবনে প্রচুর প্লাস্টিক, কেমিক্যাল, কার্টনসহ প্রচুর দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন ভয়াবহ হয়ে ওঠে। এ কারণে আগুন দ্রুত অন্য ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নেভাতেও বেগ পেতে হয়।
শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ৪৯টি লাশ উদ্ধারের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) দেবাশীষ বর্ধন।
দেবাশীষ বর্ধন জানান, আগুন নেভানোর পর আবার আগুন জ্বলে উঠছিল। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও ডেমরা ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট ২০ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
তিনি বলেন, ওই কারখানার দুটি ফ্লোরের পাঁচ ও ছয়তলায় আগুন ড্যাম্পিংয়ের কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। ড্যাম্পিংয়ের কাজ শেষে সেখানে আরও লাশ রয়েছে কি না, সেটি তল্লাশি চালানো হবে।
দেবাশীষ বর্ধন সাংবাদিকদের বলেন, লাশগুলো উদ্ধারের পর অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। পাঁচ ও ছয়তলায় তল্লাশি চালিয়ে পরে আপডেট তথ্য জানাতে পারবেন।
তিনি বলেন, ওই কারখানায় কেমিক্যালসহ প্রচুর দাহ্য পদার্থ ছিল। এ কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়। প্লাস্টিক, ফয়েল, কাগজ, রেজিন, ঘিসহ তৈরি করা মালামালসহ বিভিন্ন পদার্থ ছিল। এ কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে সময় লাগে এবং বেগ পেতে হয়।
তিনি আরও বলেন, দুপুরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এখন ড্যাম্পিংয়ের কাজ চলছে।
এবিষয়ে কারখানার ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, তাঁদের ওই ভবনের কারখানায় ২০০ শ্রমিক কাজ করতেন। ওই ভবন সেন্ট্রাল গোডাউন হিসেবে তাঁরা ব্যবহার করতেন। ওই ভবনে বিভিন্ন জুসের ফ্লেভার, রোল, ফয়েল প্যাকেটসহ বিভিন্ন মালামাল ছিল। আগুন লাগার পর কত শ্রমিক আটকা পড়েছেন, তা তাঁরা জানেন না।
তবে তাঁর দাবি বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন, ওই কারখানার মালিকপক্ষ জানিয়েছে, সেখানে ২০০ শ্রমিক কাজ করতেন। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ৫১ জন শ্রমিক নিখোঁজের তথ্য তারা লিপিবদ্ধ করেছে। ইতিমধ্যে ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশগুলো পুড়ে গেছে, সেগুলো দেখে চেনা বা শনাক্ত করার উপায় নেই।
পুলিশ সুপার বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিআইডি ও পুলিশের টিম রয়েছে। জেলা পুলিশের নিয়ন্ত্রণকক্ষ (কন্ট্রোল রুম) খোলা হয়েছে। সেখানে ডিএনএ টেস্ট করে পরিচয় নিশ্চিত করা হবে।
পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন, পাঁচ ও ছয়তলায় আগুন নেভানো শেষে তল্লাশি চালানো হবে। সেখানে লাশ থাকলেও থাকতে পারে। তিনি বলেন, কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোক কারখানায় ভাঙচুর করার চেষ্টা করেছেন। তাঁদের কাঁদানে শেল ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: