ভারতের কেরালার বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি তরুণী নিপীড়ন ও ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার আশরাফুল মন্ডল রাফি ওরফে বস রাফির কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে র্যাব।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
সোমবার রাফিকে ঝিনাইদহ থেকে তিন সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করে র্যাব।
জিজ্ঞাসাবাদে রাফি জানিয়েছেন, তারা মাত্র ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে নিয়ে গত আট বছরে কমপক্ষে ৫০০ তরুণীকে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে। যাদেরকে টিকটক মডেল হওয়া ও ভারতে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হয়।
সম্প্রতি বাংলাদেশের এক তরুণীকে ভারতে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হয়। শারিরীক নির্যাতনের সময় ২২ বছরের ওই তরুণীকে দল বেঁধে ধর্ষণও করা হয়।
ওই ঘটনায় ভারতের বেঙ্গালুরুতে পুলিশ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। এদের মধ্যে হৃদয়সহ দুজন পালানোর সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানিয়েছে ভারতের পুলিশ। নির্যাতনে অংশ নেয়া টিকটক হৃদয় বাবু ছাড়াও তিনজনকে শনাক্ত করা হয়। যারা যশোর ও ঝিনাইদহ এলাকার। চক্রের অন্যরাও বাংলাদেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারতে নির্যাতনের শিকার ওই তরুণীর বাবা গত ২৭ মে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক নারী পাচার চক্রের অন্যতম হোতা আশরাফুল মন্ডল ওরফে বস রাফিসহ চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
র্যাব জানায়, চক্রটি সীমান্তে থাকা বিজিবি ও বিএসএফ সদস্যদের ‘ম্যানেজ’ করে কাঁটাতারের বেড়া কেটে গত আট বছরে ৫০০ নারীকে ভারতে পাচার করেছে। ভারতে নিয়ে এসব নারীকে মাদক সেবনসহ নানাভাবে নির্যাতন করে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করে চক্রটি। নারী প্রতি তারা ২০-৩০ হাজার টাকা নিত ভারতীয় দালালদের কাছ থেকে। এ ছাড়া মাসিক কিছু কমিশনও পেত।
গ্রেপ্তার চক্রের বাকি তিন সদস্য হলেন বস রাফির অন্যতম নারী সহযোগী সাহিদা বেগম ওরফে ম্যাডাম সাহিদা (৪৬), মো. ইসমাইল সরদার (৩৮) ও মো. আব্দুর রহমান শেখ ওরফে আরমান শেখ (২৬)।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, পাচারের শিকার নারীদের যৌন নির্যাতন ও মাদক সেবন করানো হতো। তাদের বিভিন্নভাবে জিম্মি করে বিদেশে পাচার করতো এ চক্রটি। টিকটক ভিডিওর মাধ্যমে তারা সহজেই নারীদের আকর্ষণ করতো।
র্যাব পরিচালক বলেন, ‘বিদেশে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে পাঁচ শতাধিক নারীকে বিক্রি করে দিয়েছে এই চক্রটি। এসব নারীদের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন বাংলো ও বিদেশের মাটিতে যৌন নির্যাতন করে সেগুলো ভিডিও ধারণ করা হতো। পরবর্তীতে সেই ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তাদের জিম্মি করা হয়। তাদের ভারত থেকে অন্য দেশেও যেতে বাধ্য করা হত।
কমান্ডার আল মঈন বলেন, সোমবার ঝিনাইদহে অভিযান চালিয়ে আন্তর্জাতিক নারী পাচার চক্রের অন্যতম মূলহোতা আশরাফুল ইসলাম রাফি ও তার সহযোগী ম্যাডাম সাহিদাসহ চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরো বলেন, আশরাফুল ইসলাম রাফির (ভারতে রাফি নামে পরিচিত) হাত ধরে অনেক নারী ভারতে পাচার হয়েছে। টিকটকে মডেল হওয়ার কাজে ভারতে যাওয়ার প্রলোভন দেখালেও তাদের ভারতে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক মাদক সেবন করিয়ে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করানো হতো।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, এ চক্রটি ভিকটিমদের বৈধ ও অবৈধ দুভাবেই সীমান্ত পার করতো। তাদের বিভিন্ন কৌশলে সীমান্ত এলাকার সেফ হাউসে রাখতো। এরপর সেখান থেকে অন্যদেশে পাঠানো হতো।
তিনি বলেন, আমাদের তৎপর বাড়ানো হচ্ছে। এ সব চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারে র্যাব কাজ করে যাচ্ছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: