ভারতে বাংলাদেশি এক তরুণীকে যৌন নির্যাতন ও ইন্টারনেটে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা সামনে এলে বেরিয়ে আসে টিকটক ভিডিও তৈরির ফাঁদে ফেলে তরুণীদের ভারতে পাচার করার বিষয়টি। এরপরই পুলিশ ঘটনার অনুসন্ধানে মাঠে নামে। এরপরই বাংলাদেশি টিকটক হৃদয় বাবুসহ ছয়জনকে আটক করেছে ভারতীয় পুলিশ। আটকদের মধ্যে দুই নারী রয়েছেন।
এদিকে অভিযুক্ত হৃদয় ও এক নারীসহ অজ্ঞাতনামা আরও চার আসামির বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার (২৭ মে) রাতে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেছে নির্যাতিতার পরিবার। তাকে উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন তেজগাঁও বিভাগের ডিসি।
হৃদয় রাজধানীর উত্তরা, খিলগাঁও ও হাতিরঝিলে মেয়েদের নিয়ে টিকটক ভিডিও তৈরি করতেন। সেখান থেকেই মেয়েদের ফাঁদে ফেলে মানব পাচারকারী চক্রের যোগসাজশে ভারতে পাচার করতেন। এরই মধ্যে হৃদয় আরও কয়েকজন তরুণীকে ভারতে পাচার করেছেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।
সম্প্রতি ভারতে বাংলাদেশি এক তরুণীকে যৌন নির্যাতনের ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ভিডিওতে দেখা যাওয়া পাঁচজনের ছবি প্রকাশ করে বৃহস্পতিবার তাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করে আসাম রাজ্যের পুলিশ। ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ এনে মামলাও হয় সেখানে। ওই দিনই বেঙ্গালুরুতে গ্রেপ্তার হন অভিযুক্ত হৃদয় বাবু, মো. বাবু শেখ, সাগর ও দুই নারীসহ ছয় আসামি।
ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়, গতকাল শুক্রবার ভোররাতে আসামিদের ঘটনাস্থলে নিয়ে গেলে দুজন পালানোর চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ গুলি ছুড়লে দুজন আহত হন। তাদের একজন টিকটক হৃদয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।
এদিকে এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত হৃদয় বাবুসহ অজ্ঞাত চার আসামির বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় মানবপাচার নিয়ন্ত্রণ আইন ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করে ভুক্তভোগীর বাবা। এ ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে নির্যাতিতার পরিবার।
নির্যাতনের শিকার তরুণীর বাবা বলেন, মেয়ে আমাকে বলছে, বাবা একটা ছেলে আমাকে খুব বিরক্ত করে। এরপর থেকে এক বছর ধরে মেয়ে আমার কাছে নেই, কোথায় আছে, আমি জানি না। করোনাভাইরাসের সময় সব এলোমেলো হয়ে যায়। সংসার আর চলছিল না বলে পুরো পরিবারকে গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ পাঠিয়ে দেই। তাই এর মাঝে আর মেয়ের খবর নেওয়া হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমার তিন সন্তান। রাস্তায় ঘুরে ঘুরে শরবত বিক্রি করে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। জামাই বিদেশে থাকে। ভেবেছিলাম মেয়ে চাঁদপুরে শ্বশুরবাড়িতে আছে। এখন মেয়েকে পাচারের খবর জানতে পেরে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে।’
মামলার এজাহারে বলা হয়, হৃদয় বাবু তরুণীকে দুবাই নিয়ে যাওয়ার কথা বলে এক বছর আগে পাচারের উদ্দেশ্য ভারতে নিয়ে যায়।
তরুণীর বাবা আরও বলেন ‘সাড়ে তিন বছর আগে জামাই কুয়েতে গেলে মেয়েটি মাঝেমধ্যে ঢাকায় এসে থাকত। প্রায় এক বছর হলো মেয়ের সঙ্গে আমার দেখা নেই। দেড় বছর আগে মেয়েটি ওর স্বামীর বন্ধু হৃদয়ের মাধ্যমে দুবাই যাওয়ার ভাবনার কথা জানালে নিষেধ করেছিলাম। জোরাজুরি করলে পরে রাজি হই। এখন শুনছি হৃদয় আমার মেয়েকে ভারতে বিক্রি করে দিয়েছে। আমার মেয়ের অপহরণকারী হৃদয়সহ অন্য অপরাধীরা ভারতে গ্রেপ্তার হয়েছে। মেয়েকে ফিরে পেতে আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাই।’
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মো. শহীদুল্লাহ জানান, টিকটক হৃদয়ের সঙ্গে ওই নারীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয়। হৃদয় তাকে ভালো বেতনে চাকরিসহ বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পাচার করে যৌনপল্লীতে বিক্রি করে দেয়। ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে নির্যাতিতা তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: