আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনে এবার বেশ শক্তপোক্ত লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন সাধারণ ভোটাররা। এ আসনে এবার মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগেরই ৩ জন হেভিওয়েট প্রার্থী। তাই ভোটের রাজনীতি হয়ে উঠেছে চাঙ্গা, রাজনীতির মাঠ এখন অনেক সরগরম।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুর রহমান হেলাল নৌকা প্রতীক নিয়ে রয়েছেন মাঠে। অন্যদিকে স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর একজন বর্তমান সাংসদ ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান যিনি লড়ছেন ঈগল প্রতীক নিয়ে এবং অন্যজন সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুর রশীদ লড়ছেন ট্রাক প্রতীকে। তৃণমূল পর্যায়ে তিনজনই অতি পরিচিত মুখ এবং তিনজনেরই রয়েছে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। তাই এবারের নির্বাচনে অন্যরকম এক ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে জামালপুর-৪ আসনে।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুর রহমান হেলালের রয়েছে পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্য। তার বাবা আব্দুল মালেক চার দশকেরও বেশি সময় সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে সরিষাবাড়ী থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেছেন। বাবার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের সুবাদে দলের এবং সাধারণ জনগণের মাঝে একটা আলাদা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে নৌকার প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের মৎস ও প্রাণীসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুর রহমান হেলালের।
অন্যদিকে, বর্তমান সাংসদ ডা. মুরাদ হাসানও জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন জামালপুর-৪ আসনের পথে প্রান্তরে। তারও রয়েছে পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্য। তার পিতা মতিয়র রহমান তালুকদার ছিলেন জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তবে ২০২১ সালে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সাথে একটি ফোনালাপ ভাইরাল হলে তাকে মন্ত্রীত্ব ও দলীয় সকল পদ-পদবী হারাতে হয়। যার ফলে তার সামাজিক মর্যাদা অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঈগল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন আলোচিত এই সাংসদ। দুইবারের এ সংসদ সদস্য ২০১৮ পরবর্তী সময়ে দুইটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। দুই মেয়াদে এলাকার সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করায় এলাকায় তার তৈরি হয়েছে বড় এক কর্মীবাহিনী। জানা যায়, বিশাল কর্মী বাহিনী গড়ে তুলতে ড. মুরাদের অর্থনৈতিক ভিত্তিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তৃণমূলের এই কর্মীদের উপরই আস্থা রেখে কাজ করে যাচ্ছেন ডা. মুরাদ।
জামালপুর-৪ আসনের আরেক হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ অব্দুর রশীদ। তিনি লড়ছেন ট্রাক প্রতীকে। আব্দুর রশীদ সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এবং তেজগাঁও থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। তিনি উপজেলায় পরিচিত মুখ এবং ১৯৯৬ সাল থেকে নৌকার মনোনয়ন চেয়ে আসছেন। এলাকায় তারও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ভোটারদের অনেকে।
উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা তার সাথে কাজ করায় ভোটের রাজনীতিতে তিনি কিছুটা এগিয়ে রয়েছেন। জানা গেছে সংগঠনেও তার দখল রয়েছে। যার ফলে তৃণমূলের অনেকেই মনে করছেন ভোটের খেলায় আব্দুর রশীদ চমক দেখাবেন। তবে তৃণমূলের একটা অংশ তার রাজনৈতিক আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে সব কিছু ছাপিয়ে এ তিন প্রার্থীর মাঝে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে আশা রাখছেন ভোটাররা।
উল্লেখ্য, জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) এ আসনটি সরিষাবাড়ী উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এ আসনের মোট ভোটার ২ লাখ ৮৯ হাজার ২৬৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৭৫ জন। আর নারী ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮৭ জন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: