করোনাকালীন এই মহাসংকটে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ঈদ উপহার দিয়েছিল খোদ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে। সিদ্ধান্ত ছিল ঈদের পূর্ব মুহূর্তে এই আর্থিক সহায়তা তালিকাভুক্তদের হাতে পৌঁছে দেয়ার।
সরকারের এই সিদ্ধান্তে জেলার ৭৬টির মধ্যে ৭৫টি ইউনিয়নে আর্থিক সহায়তা পেয়ে ঈদ উদযাপন করলেও, বঞ্চিত হয়েছে ছোটবিঘাই ইউনিয়নের অন্তত ৪ হাজার ১৩ জন মানুষ।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের খাম-খেয়ালিপনায় তালিকাভুক্ত মানুষগুলো ঈদ উপহার বঞ্চিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত ছোটবিঘাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আলতাফ হোসেন হাওলাদার বলেন, গত ৬ মে ঈদ সহায়তার অর্থের চেক হাতে পেয়ে ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু ব্যাংক খুচরা টাকা দিতে না পারায় যথাসময়ে ওই টাকা উত্তোলন করে বিতরণ সম্ভব হয়নি। কিন্তু জেলা প্রশাসন বলছে ভিন্ন কথা।
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, ১৫ দিন আগেই প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তার অর্থের চেক ছাড় করা হয়েছিল। তবে কেন ওই ইউনিয়নে যথাসময়ে বিতরণ করা হয়নি, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালী জেলার ৭৬ ইউনিয়নে জনপ্রতি ৪৫০ টাকা করে ঈদ উপহার দেয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। যথা সময়ে প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এই অর্থ বিতরণ করলেও শুধু মাত্র বিতরণ হয়নি পটুয়াখালী সদর উপজেলার ছোটবিঘাই ইউনিয়নে। জেলা প্রশাসন বলছে- যথা সময়ে অর্থ ছাড় করে দিলেও টাকা দিতে ব্যর্থ হয়েছে চেয়ারম্যান।
এ প্রসঙ্গে সদর উপজেলার জৈনকাঠি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফিরোজ আলম বলেন, ঈদের এক সপ্তাহ আগে আমরা প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার বিতরণ করেছি।
তালিকাভুক্ত ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, চার মেয়ে ও এক ছেলেসহ সাতজনের সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছি। করোনাকালে এমনিতেই কাজ নেই। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঈদ উপহার ৪৫০ টাকাটা ঈদের আগে হাতে পেলেও কোনো রকমে ঈদটা করতে পারতাম। কিন্তু তা আর হলো না।
৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আসলাম মৃধা বলেন, উল্লেখিত অর্থ চেয়ারম্যানের নামে বরাদ্দ আসে। যথাসময়ে তাকে দিতে আমরা তাগিদ দিয়েছি। কিন্তু চেয়ারম্যান বলেন- ব্যাংক থেকে খুচরা টাকা দিতে চায় না। তাই দিতে পারে নায়। এছাড়া আমার কিছু জানা নেই।
এ প্রসঙ্গে উপজেলার সদরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ছোটবিঘাই ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার সুভাষ চন্দ্র হাওলাদার বলেন, আমি যথাসময়ে চেয়ারম্যানকে ঈদ সহায়তা বাবদ টাকা দিতে তাগিদ দিয়েছি। কিন্তু তিনি কেন যে দিলেন না, তা আমি অবগত নয়।
এদিকে ঈদ মুহূর্তে জেলেদের চাল নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নেয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে আলতাব হাওলাদারের বিরুদ্ধে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহাফুজুর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন। ওই মামলায় সদর ইউএনও লতিফা জান্নাতি, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শাহীন মাহমুদ, দায়িত্বরত ট্যাগ অফিসার সুভাষ চন্দ্র হাওলাদারসহ সংশ্লিষ্টদের বাদী করা হয়েছে। মামলায় বাদী ১৩ বস্তা চালের অসঙ্গতি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: