চির বিদায় জানানো হয়েছে জাতীয় সংসদ উপনেতা, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধায় সিক্ত সদ্যপ্রয়াত এ প্রবীণ রাজনীতিবিদ।
সোমবার বেলা ৩টায় মরহুমের মরদেহ রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, দলের সংকটে তিনি সাহসী নেতা ছিলেন। তিনি ছিলেন জাতি পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সৈনিক এবং আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত বিশ্বস্ত সহকর্মী। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক বড় অধ্যায় জুড়ে রয়েছেন তিনি। স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি রণাঙ্গণেও ছিলেন সৈনিক। স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধুর দেশ পুনর্গঠনে ভূমিকা রেখেছেন। তারপর আবার সংকট, রক্তাক্ত পঁচাত্তরের পর প্রত্যেকটি সংকটে তিনি ছিলেন।
অনেকে জানে না, তিনি ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অনেক দিন বন্দী ছিলেন। তার শূণ্যতা সহজে পূরণ হবার নয়।
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, দলের দুঃসময়ে সাজেদা চৌধুরীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। পচাত্তরের পর দলকে সংগঠিত করার জন্য তিনি কাজ করেছেন। ৮১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দলের সভাপতি হয়েছেন তখন সাজেদা চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর সাথে ছায়ার মতো ছিলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ২০০৭-০৮ সালে যখন অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন তখন তখন নেত্রীর পাশে ছিলেন সাজেদা চৌধুরী। আওয়ামীলীগের ইতিহাস তো বটেই, বাংলাদেশের ইতিহাস লিখতে হলেও সাজেদা চৌধুরী থাকবে। তার এই বিদায় আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনার। দেশ একজন দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাকে হারালো।
শ্যামা ওবায়েদ বলেন, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী আজকে আমাদের মাঝে নেই, ওনার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। তিনি মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে এদেশের রাজনীতিতে উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের রাজনীতে তিনি অবশ্যই অবিশ্বরণীয়, ওনার অবদান অবশ্যই মানুষ স্মরণ করবে। আমার বাবার সাথে তিনি রাজনীতি করেছেন, একে অপরের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন। তবে যখনই কোথাও দেখা হয়েছে রাজনীতির ওপরে ওঠে গিয়ে তাদের সম্পর্ক ছিলো। আমি নিজে ওনার সাথে ২০০৯ সালে ও ২০১৮ সালে ওনার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি এবং যখনই ওনার সাথে আমার দেখা হয়েছে, ওনি আমাকে স্নেহের সাথে গ্রহণ করেছেন। আমি ওনার জন্য দোয়া করি আল্লাহ যেন ওনাকে বেহেস্ত নসীব করেন।
তিনি দলের পক্ষে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আমার এলাকার পক্ষ থেকে এসেছি। ওনাকে সকালে নেয়া হয়েছে কিন্তু আমি তাকে সেখানে পাইনি। তাই এখানে এসেছি শ্রদ্ধা জানাতে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন - সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী একজন অসময়ের কান্ডারী। তিনি মুক্তিযুদ্ধের নারী সংগটকের মধ্যে এক নম্বরে থাকবেন। তিনি আরো বলেন - সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে যেন স্কুলের পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয় ।
বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামীলিগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনসহ জাসদ কেন্দ্রীয় সংসদ, গণতন্ত্রী পার্টি, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি, ছাত্রলীগ ঢাবি শাখা, ঢাকা মহানগর উত্তরা, ঢাকা মহানগর উত্তর, উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা নগর থানা আওয়ামীলীগ, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ এডমিনিস্ট্রেটিভ এ্যাসোসিয়েশন, ইসমত কাদির গামা জাতীয় মহিলা শ্রমিকলীগ, বাংলাদেশ গণ আজাদী লীগ, অরুণ রানার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, তারিক জুতা, কবি হানিফ খানের নেতৃত্ব জাতীয় কবিতা পরিষদ, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগ, বঙ্গবন্ধু শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতি, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগ, বাংলাদেশ যুব মৈত্রী, কে এম খালিদ সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, লিয়াকত আলী লাকী বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় পার্টি(জেপি), ঢাবি এ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, বাংলা আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ যুব মহিলালীগ, উপ-পুলিশ কমিশনার(রমনা), মহিলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষে শ্যামা ওবায়েদ সাংগঠনিক সম্পাদক, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, মহানগর সার্বজনীন পুজা কমিটি, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সী, জাতীয় শ্রমিকলীগ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীসহ সামাজিক- রাজনৈতিক- সংস্কৃতিক সংগঠন ।
সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে ফরিদপুরের নগরকান্দায় সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ১ম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বাদ আসর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।পরবর্তীতে বনানী কবরস্থানে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে। রোববার রাত ১১টা ৪০ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী মারা যান।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: