ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার প্রভাবে গত কয়েক মাস ধরেই অন্যান্য নিত্যপণ্যের পাশাপাশি চড়েছিল চালের বাজারও। তবে সরকারের নানা উদ্যোগে চালের দাম কিছুটা কমেছিল। গেল দুই সপ্তাহ ধরে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছিল ভোক্তাদের মাঝে। তবে গত শনিবার থেকে আবারও অস্থির হতে শুরু করেছে চালের বাজার। আগের সপ্তাহের তুলনায় চালের মান ও বাজারভেদে কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা করে বাড়তি গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
নতুন করে দাম বাড়ার দায় খুচরা বিক্রেতারা দিচ্ছেন পাইকারদের ওপর। আর পাইকাররা দোষ দিচ্ছেন মিলারদের। মিলাররা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় চালের উৎপাদন খরচ বেড়েছে বলেই তারা দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন।
গতকাল ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে বাজারে আসা নতুন ৫০ কেজির মিনিকেট চালের বস্তায় ৭০-৭৫ টাকা বাড়তি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এর সঙ্গে অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজি চালের দাম আরও ২ টাকা পড়েছে। তারা বলছেন, চালের দাম আরেক দফা বাড়তে পারে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে বাজারে আসা চাল কেজিতে ২ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। অধিকাংশ দোকানেই ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি করছেন ৭০-৭৩ টাকা করে। গত সপ্তাহে যা ছিল ৬৮ থেকে ৭১ টাকা।
কারওয়ান বাজারের নোয়াখালী রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী ফারুক দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে সব ধরনের চালের দাম কমেছে। মানভেদে প্রতি কেজি চালে অন্তত ৩ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত কমেছে। কিন্তু মিলাররা নতুন করে মিনিকেট চালের বস্তায় আরও ১০০ টাকা বাড়তি দাবি করছেন। তারা বলছেন, মার্কেটে চালের দাম বেশি তাই বেশি দামেই চাল নিতে হবে।
এ বাজারের আরেক চাল ব্যবসায়ী ফিরোজের সঙ্গে কথা হলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, মিলাররা আবারও চালের দাম বাড়িয়েছে। তাই তো নতুন করে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট থেকে আনা মিনিকেট চালের বস্তায় ৭৫ টাকা করে বাড়তি দিতে হয়েছে। এখন যাদের কাছে গত সপ্তাহের চাল রয়েছে তারাই কেবল ৭০ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন। তবে নতুন চাল ৭৩ টাকার নিচে কোনো ব্যবসায়ী বিক্রি করতে পারবে না।
তেজগাঁও এলাকার মুদি দোকানি শরীফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, আড়তদারদের থেকে যদি বেশি দামে চাল কিনি তাহলে বেশি দামে আমরা বিক্রি করে থাকি। আর কম দামে কেনা থাকলে কম দামে বেচি। কিন্তু দিন শেষে আমরাও মানুষ। নিত্যপণ্যের দাম কম থাকলে আমরা স্বস্তিতে থাকি। একজন ব্যবসায়ী হিসেবে গেল কয়েক মাসের হিসেব করলে লসের মধ্যে রয়েছে। আগের মতো বেচাবিক্রি হয় না। ভাড়াসহ সব খরচ আগের থেকে বেড়েছে।
এদিকে নওগাঁর চাল উৎপাদনকারী অটোরাইস মিলারদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, এ মাসে ধানের দাম বেশি। ধান থেকে চাল উৎপাদন করে আমাদের হাতেই খরচ পড়ে ৭০ টাকা। এর বাইরে বস্তা, মিল ও পরিবহন খরচ তো রয়েছে। তবে চালের বাজারের এ দুরবস্থা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে বলে তারা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা চালকল সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত এক সপ্তাহ পূর্বেও ধানের বাজার সস্তা ছিল। যেহেতু এখন আর ধানের সিজন নেই তাই ধানের দাম একটু বেশি। প্রতি মণ ধানে ২৪-২৫ কেজি চাল উৎপাদন হয়। এ হিসেবে প্রতি কেজি চালের উৎপাদন খরচ পড়ে ৬৯ টাকা। এর সঙ্গে আরও ২ টাকা যুক্ত হয় উৎপাদন, পরিবহন ও প্যাকেটজাত খরচ।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: