মুজিববর্ষে ভূমিহীন-গৃহহীনদের একটি সুন্দর ঘরের স্বপ্ন পূরণে জমি সহ ঘর উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে অভিযোগ উঠেছে গৃহহীনদের একটি ঘর রেজিস্ট্রি করে দেয়া হয়েছে এক বিত্তশালীর নামে। সেই ঘর আবার দুই লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন দুই ইউপি অফিসের নায়েব। কিন্তু রেজিস্ট্রি করে না দিতে পারায় শুরু হয়ে যায় তুলকালাম।
জানা গেছে, উপজেলায় প্রথম ধাপে ১০২ পরিবার পায় দুই শতক জমিসহ পাকাঘর। এরমধ্যে উপজেলার শাহাজাদাপুর এলাকায় আশ্রয়ন প্রকল্পে দুই শতক জমিসহ ৯০ নম্বর ঘরটির বরাদ্দ দিয়ে আব্দুল হাশিম ও তার স্ত্রী সেলিনা বেগমের নামে যৌথ দলিলও সম্পাদনা করেছে উপজেলা ভূমি অফিস।
আব্দুল হাশিম মিয়া উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের রাণীদিয়া গ্রামের গোলাম মোস্তফা মিয়ার ছেলে ও বিত্তশালী। তবে এই জায়গাসহ ঘর বরাদ্দ পেয়ে দলিলের বিষয়ে জানেন না তিনি।
আব্দুল হাশিম মিয়ার নামে রেজিস্ট্রি করা ঘর ও জমি দুই লাখ টাকায় বিধবা সাফিয়া বেগম ও তার স্বামী পরিত্যক্তা মেয়ে রুনা বেগমের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়ন তেলিকান্দি ভূমি অফিসের ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুছ ও শাহাজাদাপুর ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা হারুন মিয়া।
প্রথমে দুই ধাপে সাফিয়া বেগম ও তার মেয়ের কাছ থেকে প্রায় মাসখানেক আগে এই জমিসহ ঘরের বায়না বাবদ দেড় লাখ টাকা গ্রহণ করেন এই দুই ভূমি কর্মকর্তা। গত ৬ মে মৌখিক চুক্তি অনুযায়ী মা-মেয়েকে দলিল করে দেয়ার পর বাকি ৫০ হাজার টাকা তাদেরকে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন এই ঘরের প্রকৃত মালিক আব্দুল হাশিম মিয়ার নামের দলিল পরিবর্তন করে সাফিয়া বেগম ও তার মেয়ের নামে নতুনভাবে মালিকানা দলিল দিতে না পারায় বাকি ৫০ হাজার টাকা তাদেরকে দেয়া হয়নি। এতে ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী এই দুই কর্মকর্তা এবং ক্রেতা সাফিয়া বেগম ও তার মেয়ে রুনা বেগমের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়।
ভুক্তভোগী সাফিয়া বেগম ও তার মেয়ে রুনা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভূমি অফিসার আব্দুল কুদ্দুছ আশ্রয়ন প্রল্পের একটি ঘর দুই শতক জায়গাসহ দুই লাখ টাকায় আমাদের কাছে বিক্রি করেছেন। তিনি বলেছিলেন, এই ঘর যিনি পেয়েছেন তিনি অরুয়াইলের রাণীদিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি শাহাজাদাপুর এলাকায় এতো দূরে বসবাস করতে আসবেন না। তাই অন্তত ১০ লাখ টাকার সম্পদ মাত্র দুই লাখ টাকায় তিনি আমাদের দয়া করে দিচ্ছেন। দলিলে আব্দুল হাশিম মিয়ার ছবি কেটে ও নাম পরিবর্তন করে সেখানে আমার ছবি ও নাম বসিয়ে নতুনভাবে দলিল সম্পাদনা করে দেবেন। তার কথা বিশ্বাস করে দেড় লাখ টাকা নিয়ে দিয়েছি।’
এদিকে শাহাজাদাপুর এলাকায় আশ্রয়ন প্রকল্পে ৯০ নম্বর ঘরের দলিলের প্রকৃত মালিক অরুয়াইলের রাণীদিয়া গ্রামের আব্দুল হাশিম মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে সহায়-সম্পত্তি কম দেয়নি। আমি সরকারি ঘর চাইতে যাব কেন? এলাকায় আমার একটা মর্যাদা আছে। আমার এক ছেলে রাসেল মাহমুদ জেলার নবীনগর উপজেলার লাউর ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব পদে চাকরি করছে। কয়েকমাস আগে বাড়ির পাশের একটি খাসজমি লিজ-বন্দোবস্ত করে আনতে আমার ছবি, ভোটার কার্ড ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আমার ছেলে কুদ্দুছের কাছে দিয়েছিল। আমি দলিল করতেও যাইনি। এই ঘর-জমি নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’
এ বিষয়ে পাকশিমুল (তেলিকান্দি) ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, ‘সাফিয়া বেগম ও তার মেয়ে রুনা বেগম আমার কাছে সরকারি ঘর চেয়েছিলেন। তবে আমি তাদের কাছ থেকে কোনো টাকা-পয়সা নেইনি। তারা মিথ্যা কথা বলছেন। আমি তাদেরকে শাহাজাদাপুর এলাকায় আশ্রয়ন প্রকল্পে নিয়ে গিয়েছিলাম হারুন মিয়ার কথায়। রুনা বেগম ও তার মা সেখানকার আশ্রয়ন প্রকল্প চেনেন না। এজন্য তাদের পথ দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম। তাদেরকে সেখানে রেখে সঙ্গে সঙ্গে আমি চলে আসি।’
শাহাজাদাপুর ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা হারুন মিয়া বলেন, ‘সাফিয়া বেগম ও রুনা বেগম এখানে আশ্রয়ন প্রকল্পে থাকতে পারবেন অরিজিনাল মালিক আব্দুল হাশিম মিয়ার ওয়ারিশ পরিচয়ে। কিন্তু তারা মা ও মেয়ে তাদের নামের দলিল চান। তাদের কাছ থেকে আমি একটি টাকাও নেইনি। তাদের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল হক মৃদুল সাংবাদিকদের বলেন, সাফিয়া বেগম ও তার মেয়ে মৌখিক অভিযোগ জানিয়ে গেছেন। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের আমার দফতরে হাজির হতে বলেছি। ওই সময়ে অভিযোগকারী মা ও মেয়েকেও থাকতে বলেছি। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে অবশ্যই দেখব। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্র: জাগো নিউজ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: