সব শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতিহাসবোধটা জাগ্রত করতে হবে। শুধুমাত্র ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থীরা ইতিহাস নিয়ে চর্চা করবে এমন না প্রত্যেক বিভাগেই ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা উচিত। ইতিহাসবোধ সবার মধ্যে থাকা উচিত। আমরা যে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করতে যাচ্ছি সেখানেও ইতিহাসবোধ জাগ্রত করার বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছি।
বুধবার জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে 'বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র: পেছন ফিরে দেখা' শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকাণ্ডে জিয়ার ভূমিকার কারণে শুধু ইতিহাসবিদই নয়, পুরো জাতির নিকট জিয়া শ্রেষ্ঠ খলনায়ক হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন পাকিস্তান কাঠামোতে কখনও পূর্ব বাংলার মানুষের উন্নতি সম্ভব নয়। বাঙালি জাতির জন্য তিনি আলাদা স্বাধীন ভূখন্ড চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু প্রথমে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা নিজের মধ্যে ধারণ করেন এবং পরবর্তীতে জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দেন।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙ্গালী পরিচিত হয়েছিল মুজিবের মানুষ হিসেবে। যুদ্ধও পরিচালিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর নামে। বিশ্ব মুক্তিযুদ্ধের সময় সাহায্য করেছিলো মুজিবের নামে। তখন যারা বাংলাদেশকে চিনতো না তারা এ দেশকে মুজিবের দেশ হিসেবে জানতো।
ডা. দীপু মনি বলেন, বাংলাদেশে এমন অঞ্চল পাবেন না যেখানে বঙ্গবন্ধু যাননি। প্রত্যেক অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক ছিলো বঙ্গবন্ধুর। বঙ্গবন্ধু নিজের জীবনের মায়া কখনও করেননি। ৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি কারণ ওইযে ইতিহাসবোধ। তিনি জানতেন পাকিস্তানিরা যুদ্ধ চাপিয়ে দেবেন। এজন্যই ওনি ভাষণে কি করতে হবে বলে দিয়েছেন, কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। যখনই গণহত্যা চাপিয়ে দেওয়া হলো তখনই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন।
দীপু মনি বলেন, শেখ মুজিবকে আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের যে কাজ তাই তাঁর হত্যার কারণ। কি পরিমাণ হিংস্রতা ছিলো যে ১৮ টা গুলি করতে হয়েছে একজন মানুষকে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করতে এ হত্যাকান্ড চালানো হয়েছে। হত্যাকারীদের হিংস্রতা ঘৃণা এখনও আছে বলেই ২১ বার বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ অপরাজনীতি, রক্তশোষণ চায়না, বৈষম্য চায়না, চায় অসাম্প্রদায়িক দেশ। বঙ্গবন্ধু রাজস্বী। তিনি আমাদের হৃদয়ে আছেন। বঙ্গবন্ধু বিশ্বময় যেমন তিনি ৭১ এ ছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, আওয়ামী লীগ যে রাজনীতি নিয়ে এগিয়ে চলছে তা আদর্শভিত্তিক, আর অন্যরা যে রাজনীতি করছে তা নেতিবাচক। অসহ্য মিথ্যাচার, মারামারির যে রাজনীতি করে তা আমার কাছে রাজনীতি মনে হয় না। বঙ্গবন্ধু মানুষের বাইরে কিছু বুঝতেন না। তিনি ক্ষমতায় এসতে চেয়েছিলেন মানুষের জন্য।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সহ সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. ছিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন, প্রবন্ধের ওপর মূখ্য আলোচনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সেলিম।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: