সরকারি কোম্পানিগুলোকে নিজস্ব আয়-ব্যয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, সরকারি কোম্পানিগুলোকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। ব্যাংক-বীমা, টেলিযোগাযোগ, পর্যটন খাতের এসব প্রতিষ্ঠানকে বছরের পর বছর অর্থ দিতে হবে-এটা আর চলবেনা। সরকার এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজি দিয়েছে। ব্যবস্থাপনার অন্যান্য সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তারপরও কেন তাদের দীর্ঘ দিন ধরে ক্ষতিপূরণ দিয়ে যাওয়া অর্থনৈতিকভাবে কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। সরকারি কোম্পানিগুলোকে নিজস্ব আয়-ব্যয়ে চলতে হবে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এই নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
মঙ্গলবার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। একনেক চেয়ারপারসন হিসেবে এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বৈঠকে সংযুক্ত হন তিনি। শেরেবাংলানগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলনে কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে পরিকল্পনান্ত্রীর কার্যালয়ে থেকে অনলাইনে ব্রিফিং করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশ টেলিকমিউনেকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) প্রসঙ্গে সরকারি সব কোম্পানির জন্য নিজস্ব-আয়ে ব্যয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে টেলিযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন সংক্রান্ত একটি প্রকল্পে এডিপির অধীনে অর্থ বরাদ্দ প্রসঙ্গে ওই নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, কত দিন এভাবে ক্ষতিপূরণ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। বিটিসিএলের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা নিজস্ব ব্যয়ে নির্বাহের সক্ষমতা তৈরির চেষ্টা করছে। তবে আপতত শক্তিশালী অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে শক্তিশালী টেলিনেটওয়ার্ক না থাকলে বিদেশি বিনিয়োগকারী নিরুৎসাহিত হয়। শেষ পর্যন্ত সামান্য সুদে প্রকল্পটির জন্য ৯৫ কোটি ১২ লাখ টাকার ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে।
বাজেট উপলক্ষে প্রকাশিত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানসমুহের সংক্ষিপ্তাসারে রাষ্ট্রায়ত্ত ৪৯টি অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। শিল্প, বিদ্যুত, গ্যাস, জ্বালানি, পরিবহন ও যোগাযোগ, বাণিজ্য, কৃষি ও মৎস, নির্মাণ ও সেবা খাতের এসব খাতের অধীনে শতাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওই প্রকাশনায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এসব প্রতিষ্ঠানের কিছু মুনাফায় চলছে। কিছু চলছে লোকসানে। ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত লোকসনের পরিমাণ দুই হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।
সরকারি কোম্পানিকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার বাইরে প্রধানমন্ত্রীর অন্য নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে খাল খননে দুর্নীতি। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সাধারণত, এ ধরনের প্রকল্পে খালের উপরিভাগে কোন রকম খননের মাধ্যমে দায় সারা হয়। এ বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রীর নজরেও এসেছে। এসব অনিয়ম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে তিনি। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, তিনি নিজে এবং তার মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগকে ( আইএমইডি) এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া উপজেলপা পর্যায়ে নির্মিতব্য স্টেডিয়ামগুলো যাতে সবার জন্য উম্মুক্ত থাকে সে বিষয়েও নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী।
ব্রিফিংয়ে করোনার ভারতীয় টিকা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনান্ত্রী বলেন, সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকা প্রদানে চুক্তি থেকে সরে আসার আইনি সুযোগ নেই ভারতের। তবে টিকা প্রদানে ভারতের নিজেরই সক্ষমতার ঘাটতি তৈরি হয়েছে। একারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। সরকার বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের চেষ্টা করছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: