রাষ্ট্রীয় বিমান চলাচল সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স গিলে খাচ্ছে রাজাকার সন্তান মোস্তফা কামাল, যিনি বিমান বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে কর্মরত। পিস কমিটির সদস্যের ছেলে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের রাজনীতি করা মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাজাকার পরিবারের কোনো সদস্যের চাকরি না পাওয়ার কথা থাকলেও এক্ষেত্রে সেটা মানা হয়নি। বিমানকে ঘিরে এই রাজাকার সন্তান জন্ম দিয়েছেন নানা সমালোচনার। ক্ষুন্ন করেছেন সরকারের ভাবমূর্তি।
২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তুর্কমিনিস্তানের রাজধানী আশখাবাদে জরুরি অবতরণ করে। ওই ঘটনায় পরবর্তিতে বাংলাদেশ বিমানের ছয় কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এর কিছুদিন পর আবারও প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ল্যান্ডিং এর সময় রানওয়েতে লোহার টুকরা পরে থাকতে দেখে অবতরণ কিছুটা বিলম্ব হয়। মারাত্মক দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর বিমান সর্বশেষ আলোচনায় উঠে মাত্রারিক্ত ভাড়া আদায়ের ইস্যু নিয়ে। করোনা সংক্রমণের দেড় বছরের স্থবিরতা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক বিমান যোগাযোগ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের ভোগান্তি। ইচ্ছাকৃতভাবে বাড়ানো হয় বিমানের ভাড়া। শুধু আরব আমিরাত কিংবা সৌদি আরব রুটের ভাড়া বেড়েছিল তা কিন্তু নয়, বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়ার সব রুটের বিমান ভাড়া ছিল আকাশ ছোঁয়া। তখন প্রতিটি রুটের ভাড়া বাড়ানো হয় তিন থেকে চারগুন। বিশ্বজুড়ে শ্রম বাজার খুলে যাওয়ায় টিকেটের চাহিদা কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ার এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল একটি চক্র। যার জন্য সরকারের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছিল সে সময়।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এসবের পেছনে সরাসরি হাত রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও ড: আবু সালেহ মোস্তফা কামালের। তার পছন্দের নির্দিষ্ট কিছু এজেন্সির মাধ্যমে বিমানের টিকিট বিক্রির সিন্ডিকেট তৈরি করে তিনি সাধারণ জনগণকে চরম ভোগান্তিতে ফেলেন। সেই সাথে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে টিকিটের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেন। তার প্রত্যক্ষ মদদে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা।
সম্পূর্ণ জামাত মতাদর্শী এই মোস্তফা কামাল ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে যোগদান করেন। মোস্তফা কামালের পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত চমকপ্রদ কিছু তথ্য এসেছে আমাদের হাতে। মোস্তফা কামালের পিতা মোঃ জিয়াউর রহমান মুসলিম লীগের একনিষ্ঠ সমর্থক এবং একজন সক্রিয় রাজাকার ছিলেন। এছাড়াও তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার পিস কমিটির চেয়ারম্যান ইউসুফ আলী বিশ্বাসের একান্ত আস্থাভাজন ও ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতা বিরোধীশক্তির পক্ষে তার ছিল প্রকাশ্য অবস্থান যা সম্পর্কে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের বক্তব্য সুস্পষ্ট।
শুধু তাই নয়, মোস্তফা কামালের বড় ভাই শাহ নেওয়াজ, যিনি সোনালী ব্যাংকে কর্মরত, স্থানীয় জামায়াত নেতাদের সাথে তার সখ্যতার কথা স্থানীয় সবার জানা। মোস্তফা কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে শিবিরের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন।
বিমানে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তার আওয়ামী বিরোধী মনোভাব সকলের কাছে ধরা পরে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী যেন তার আজীবনের শত্রু। তাদেরকে বদলি থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে হয়রানী করা মোস্তফা কামালের নিত্যদিনের কাজ। যার জন্য ভুক্তভোগীরা বিমানের চেয়ারম্যান ও মন্ত্রী মহোদয় বরাবর অভিযোগও করেছে কয়েকবার। প্রভাবশালী আমলা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি আজ অবধি। তাই ভুক্তভোগীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
এদিকে, জামায়াত বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে কারা মহাপরিদর্শক বিগ্রে. জেনা. মমিনুর রহমান মোমিনকে তার চাকরির মেয়াদ দেড় বছর বাকি থাকতেই সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহীদুল ইসলামকেও ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এ অবস্থায় বড় ধরনের কোনো অঘটনের আগেই রাজাকার সন্তান মোস্তফা কামালকে সরিয়ে নেয়ার দাবি তুলেছেন অনেকেই।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছিলেন, রাজাকার পরিবারের কোনো সদস্য রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করতে পারবে না।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: