গাজীপুরের শ্রীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে গত ২২ দিনে নয়টি জেব্রার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক মো. জাহিদুল কবির।
মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিকদের বলেন, “গত ২ জানুয়ারি থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে জেব্রাগুলোর মারা গেছে। মৃত জেব্রাগুলোর ময়নাতদন্তের সব প্রতিবেদন হাতে আসার পর সাফারি পার্কে বৈঠকে বসেছেন বিশেষজ্ঞদল। বিকালে এ ব্যাপারে জানানো হবে।”
তবে ২ জানুয়ারি থেকে পার্কে জেব্রার মৃত্যু শুরু হলেও কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গোপন রেখেছিল। সোমবার সন্ধ্যার পর বিষয়টি প্রকাশ পায়।
পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক মো. তবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, “গত ২ জানুয়ারি থেকে পার্কের আফ্রিকান কোর সাফারির জেব্রা বেষ্টনীতে জেব্রাগুলোর মৃত্যু হয়। ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত নয়টি জেব্রার মৃত্যু হয়েছে।”
জেব্রার মৃতদেহের নমুনা রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠানো হয়। সোমবার রাতে সবগুলো ফলাফলও হাতে পেয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সর্বশেষ পার্কে ৩১টি জেব্রা ছিল। নয়টি জেব্রা মৃত্যুর পর এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১টিতে। এর আগে অল্প সময়ে এ পার্কে এতোগুলো প্রাণী আর কখনও মারা যায়নি বলে জানান তবিবুর।
পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সকালে শুরু হওয়া বৈঠকটি দুপুর ১টা পর্যন্ত চলছিল। বৈঠকে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেনারি অনুষদের তিনজন বিশেষজ্ঞ, ঢাকা চিড়িয়াখানার সাবেক কিউরেটর মো. শহিদুল্ল্যাহ ও গাজীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পার্কের প্রকল্প পরিচালক জাহিদুল আরও জানান, খাদ্যে বিষক্রিয়া, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণসহ নানা কারণে জেব্রাগুলোর মৃত্যু হতে পারে।
তিনি বলেন, “জেব্রা দলবেঁধে চলে। আগে থেকে এদের মধ্যে কোনো রোগের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না। প্রাণীগুলো বন্য, এদের কাছেও যাওয়া যায় না। হঠাৎ তারা দল থেকে আলাদা হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট এবং পেট ফুলে গিয়ে মুখ দিয়ে ফেনা বেরুতে থাকে। এক সময় মারা যাচ্ছে।“
করোনাভাইরাস সন্দেহে পিসিআর ল্যাবে মৃত জেব্রাগুলোর নমুনা পাঠিয়ে পরীক্ষা করা হয়; কিন্তু সবগুলোর রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে বলেও জানান জাহিদুল।
তিনি বলেন, এ ছাড়া খাবারে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হতে পারে এমন সন্দেহে খাবারগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। মৃত জেব্রাগুলোর ফুসফুস, লিভার, মৃত্যুর পর পেটে থাকা অর্ধগলিত খাবার পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে জেব্রাগুলো যে খাবার খাচ্ছে, তা পার্কে থাকা অন্যান্য প্রাণীগুলোও খাচ্ছে। খাদ্যে বিষয়ক্রিয়ায় জেব্রার মৃত্যু হলে অন্যান্য প্রাণীগুলোরও মৃত্যু হতে পারত। কিন্তু তা হয়নি। খাদ্যে বিষক্রিয়াজনিত মৃত্যুর প্রমাণ মিলেনি।
প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, মারা যাওয়া জেব্রাগুলোর মধ্যে ৯০ ভাগই মাদী। এই পার্কে জন্ম নেওয়া জেব্রাগুলোর মৃত্যু বেশি হয়েছে।
পার্কের নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নেই বলে জানান জাহিদুল।
তিনি বলেন, বাইরে থেকে কেউ গিয়ে বিষ প্রয়োগের সুযোগও নেই। সব বিষয় মাথায় রেখে মৃত্যুর কারণ জানার চেষ্টা চলছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: