বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম প্রমথ চৌধুরী। তিনি বাংলাসাহিত্যে চলিত গদ্যরীতির প্রবর্তক। তার সাহিত্য রচনার সুনিপুণতা, সৃষ্টিশৈলিতা, গাম্ভীর্যতা, যুক্তিনিষ্ঠতা সাহিত্যের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। সাহিত্য অঙ্গনে প্রমথ চৌধুরীর ছদ্মনাম ছিল 'বীরবল'। এ ছদ্মনামে পত্রিকার পাতায় লেখালেখি করে তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৪৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর শান্তিনিকেতনে তার মৃত্যু হয়।
প্রমথ চৌধুরী ১৮৬৮ সালের ৭ আগস্ট তার পৈতৃক নিবাস পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর গ্রামে স্থানীয় জমিদার বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম দুর্গাদাস চৌধুরী এবং মাতার নাম মগ্নময়ী দেবী। প্রমথ চৌধুরী কলকাতার হেয়ার স্কুল থেকে এন্ট্রান্স, কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে দর্শনশাস্ত্রে প্রথম শ্রেণিতে বিএ পাস এবং ইংরেজিতে প্রথম শ্রেণিতে এমএ পাস করেন।
১৮৯৩ সালে ইংল্যান্ড গমন করেন এবং তিনি সেখান থেকে কৃতিত্বের সঙ্গেই ব্যারিস্টারি পাস করেন। কর্মজীবনে কিছুকাল তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপনা ছাড়াও সরকারের উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা ইন্দিরা দেবীকে বিয়ে করেন। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাই। সুতরাং সে হিসেবে রবীন্দ্রনাথের ভ্রাতুষ্পুত্রী-জামাতা ছিলেন প্রমথ চৌধুরী।
লেখালেখির প্রতি অতিরিক্ত আগ্রহের কারণে তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে বিখ্যাত 'সবুজপত্র' পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং কৃতিত্বের সঙ্গে পালন করেন। সবুজপত্র পত্রিকা সম্পাদনার মাধ্যমেই তিনি বাংলা সাহিত্যে চলিতরীতি প্রবর্তন করেন। তারই নেতৃত্বে বাংলা সাহিত্যে নতুন গদ্যধারা সূচিত হয়। তিনি বাংলা সাহিত্যে ইতালিয় সনেট এর প্রবর্তক।
প্রমথ চৌধুরীর গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- তেল-নুন-লাকড়ি (১৯০৬), সনেট পঞ্চাশৎ (১৯১৩), চার-ইয়ারি কথা (১৯১৬), বীরবলের হালখাতা (১৯১৬), নানাকথা (১৯১৯), The Story of Bengali Literature (১৯১৭), পদচারণ (১৯১৯), রায়তের কথা (১৯২৬), নানাচর্চা (১৯৩২), নীললোহিত (১৯৩২), আত্মকথা (১৯৪৬) প্রভৃতি।
প্রমথ চৌধুরী ১৯৩৭ সালে কৃষ্ণনগরে অনুষ্ঠিত একবিংশ বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। ১৯৪৪ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিরিশচন্দ্র ঘোষ-বক্তারূপে বঙ্গ সাহিত্যের পরিচয় তুলে ধরেন। ১৯৪১ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক জগত্তারিণী স্বর্ণপদকে ভূষিত হন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: