সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার সাক্ষী ও মসজিদের মুয়াজ্জিন মোহাম্মদ আমিন তার জবানবন্দিতে আদালতকে বলেছেন, 'ইন্সপেক্টর লিয়াকত সিনহাকে গুলি করেছেন এবং ওসি প্রদীপ তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন।'
কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে আজ সাক্ষী হাফেজ মোহাম্মদ আমিন তার জবানবন্দি দেন। তিনি ঘটনাস্থলের কাছের একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন এবং এ ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী।
আদালতের কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, সাক্ষী মোহাম্মদ আমিন তার জবানবন্দিতে আদালতকে বলেন, 'আমি একজন কুরআনে হাফেজ। মেজর সিনহাকে গুলি করে হত্যার ঘটনাটি যে জায়গায় ঘটেছে তার পাশেই বায়তুল মামুর জামে মসজিদ। আমি সে মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে কর্মরত ছিলাম। ঘটনার পরদিন ছিল ঈদুল আজহা। আমি শামলাপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের মাইকে ঈদুল আজহার নামাজের সময় জানিয়ে যে প্রচার করা হচ্ছিল সেটি শোনার জন্য কয়েকজন ছাত্র নিয়ে মসজিদের ছাদে উঠি। আমরা মসজিদের ছাদে থাকাকালে ঘটনাটি ঘটে। এক ব্যক্তি তার দুহাত উপরে উঠিয়ে গাড়ি থেকে রাস্তায় নামেন। সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যক্তিকে ইন্সপেক্টর লিয়াকত গুলি করেন। তারপর তিনি আরেকটি গুলি করলে ওই ব্যক্তি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
তিনি জবানবন্দীতে বলেন, এর কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে উপস্থিত হন টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ। তিনি ঘটনাস্থলে এসেই তার পা দিয়ে মাটিতে পরে থাকা লোকটিকে লাথি মারেন এবং পা দিয়ে গলা চেপে ধরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন। ইন্সপেক্টর লিয়াকত ও ওসি প্রদীপ দুই জনই বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্র এবং টেকনাফ থানায় চাকরি করেন। তাই তাদের দুজনকে আমি আগে থেকে চিনতাম।'
মঙ্গলবার সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে এই মামলার দ্বিতীয় দফায় তৃতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। বেলা ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা বিরতির পর বিকাল ৫টা পর্যন্ত আদালতের বিচারিক কার্যক্রম চলে।
মোহাম্মদ আমিন প্রায় ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট আদালতে মেজর সিনহাকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় জবানবন্দি দিয়েছেন। আসামি পক্ষের ১৫ জন আইনজীবী সাক্ষী আমিনকে প্রায় পৌনে চার ঘণ্টা ধরে জেরা করেন।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী, কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিউকিটর (পিপি) ফরিদুল আলম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মঙ্গলবার মামলার মোট ১৫ জন আসামিই আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, তার দেহরক্ষী কনস্টেবল রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার আওতাধীন বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের এস আই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাগর দেব, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে ১৫ আসাইকে পুলিশের প্রিজনভ্যানে করে কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। বিকাল ৫টা ১৫ মিনিটে তাদের আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
গত রোববার দ্বিতীয় দফায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। আদালতের ধার্য তারিখ অনুযায়ী দ্বিতীয় দফায় সাক্ষ্য গ্রহণ চলবে আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনী অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। হত্যার পাঁচ দিন পর ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: