রংপুর নগরীর গণেশপুর এলাকায় দুই বোনকে হত্যার দায়ে মাহফুজার রহমান রিফাত (২২) নামে এক যুবককে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। রিফাত নগরীর বাবুখা এলাকার এমদাদুল হকের ছেলে। ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে গণেশপুর এলাকার মমিনুল ইসলামের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার মীম (১৭) তার চাচাতো বোন জান্নাতুল মাওয়াকে (১৪) একসাথে হত্যার মামলায় এ আদেশ দিয়েছে আদালত।
এ মামলায় অপর আসামি রিফাতের সহযোগী রংপুর সদর উপজেলার শাহাবাজপুর এলাকার মহুবুল ইসলামের ছেলে আরিফুল ইসলাম আরিফকে (২৭) সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোস্তফা কামাল এ রায় দেন। রায় ঘোষণার সময় দুই আসামি আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
মামলা ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে বাড়িতে কেউ না থাকায় গণেশপুর এলাকার মমিনুল ইসলামের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার মীম (১৭) তার চাচাতো বোন জান্নাতুল মাওয়াকে (১৪) নিজের কাছে থাকার জন্য আনেন। প্রেমের সম্পর্কের ভিত্তিতে ওই রাতে সুমাইয়া আক্তার মীমের বাড়িতে যান নগরীর মুলাটোল মদিনাতুল উলুম কামিল (এমএ) মাদ্রাসার আলিম প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রিফাত। এ সময় মীমের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন রিফাত। পরে দু'জনের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে মীমকে হত্যা করেন রিফাত। ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য ঘরের সিলিং ফ্যানে ওড়না দিয়ে মরদেহ ঝুঁলিয়ে রেখে আত্মহত্যার নাটক সাজানোর চেষ্টা করা হয়।
এ সময় ওই বাড়িতে থাকতে আসা মীমের চাচাতো বোন জান্নাতুল মাওয়া ঘটনা টের পেলে তাকেও শ্বাসরোধে হত্যার পর আয়নার ভাঙা কাঁচ দিয়ে গলায় আঘাত করে মেঝেতে রেখে পালিয়ে যান রিফাত। পরদিন পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুই বোনের মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় কোতয়ালি থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করেন মীমের বাবা মমিনুল ইসলাম। ২০ সেপ্টেম্বর রিফাতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রিফাত আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যার দায় স্বীকার করে। তদন্ত শেষে রিফাত ও আরিফের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মজনু মিয়া ও আল-আমিন। ২৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আজ রায় ঘোষণা করা হয়।
মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) খন্দকার রফিক হাসনাইন বলেন, এ মামলার প্রধান আসামি মাহফুজার রহমান রিফাতের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। অপর আসামি আরিফুল ইসলাম আরিফ মামলার আলামত নিজ দখলে রাখাসহ প্রধান আসামিকে আলামত গোপনে সহযোগিতা করার অপরাধে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এই রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলেও জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: