প্যান্ডোরা পেপার্স। গতকাল রোববার থেকে আলোচিত শব্দ। বিশ্বের সাবেক ও বর্তমান ৩৫ রাষ্ট্রপ্রধান, ৯০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের ৩ শতাধিক রাজনীতিক ও সামরিক কর্মকর্তা এবং প্রায় একশ ধনকুবেরের গোপন সম্পদ ও লেনদেনের তথ্য ফাঁস করে বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছে প্যান্ডোরা পেপার্স। এটি ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ আর্থিক দলিলপত্র ফাঁসের ঘটনা।
প্যান্ডোরা পেপার্সের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও রাজনীতিকদের অফশোর কোম্পানি ব্যবহার করে গোপনে বিদেশে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ার তথ্য হাজির করা হয়েছে ১৮ মাসের অনুসন্ধানে।
বিশ্বের ১১৭টি দেশের ৬০০ জনের বেশি সাংবাদিক ওয়াশিংটনভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসের (আইসিআইজে) পক্ষে বিশ্বের ১৪টি কোম্পানির ১ কোটি ২০ লাখ গোপনীয় আর্থিক দলিলপত্র বিশ্লেষণ করে রোববার (৩ অক্টোবর) বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে।
আইসিআইজের এই নথিতে আছে জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বিন আল-হুসাইন, যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও তার স্ত্রী শেরি, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য, চেক রিপাবলিকের প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেজ বাবিস ও আরও অনেক নাম।
প্যান্ডোরা পেপার্স দেখিয়েছে কীভাবে বিশ্বের ৯০টিরও বেশি দেশ ও ভূখণ্ডের ৩০০ রাজনীতিক অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে গোপনে দেশের বাইরে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন।
প্যান্ডোরায় যেসব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের নাম এসেছে তারা হলেন- জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বিন আল-হুসাইন, ডোমিনিকান রিপাবলিকের প্রেসিডেন্ট লুইস আবিনাদের, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, মন্টিনিগ্রোর প্রেসিডেন্ট মিলো শুকানোভিস, কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তা, ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট গিলার্মো লাসো, কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট ডেনিস সাসো এনগুয়েসো, গ্যাবনের প্রেসিডেন্ট আলী বনগো অনডিম্বা, চিলির প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান পিনেরা, কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল-থানি, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লোদিমির জেলেনোস্কি
প্যান্ডোরা পেপার্সে সাবেক রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে যারা রয়েছেন-প্যারাগুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোরাসিও কার্টেস, কলম্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট সিজার গাভিরিয়া, পেরুর সাবেক প্রেসিডেন্ট পেদ্রো পাবলো কুকজিনস্কি, হন্ডুরাসের সাবেক প্রেসিডেন্ট পোরফিরিও লোবো সোসা, পানামার সাবেক প্রেসিডেন্ট রিকার্ডো মার্টিনেলি, কলম্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস পাস্ত্রানা, পানামার সাবেক প্রেসিডেন্ট আর্নেস্তো পেরেজ বাল্লাডারেস, পানামার সাবেক প্রেসিডেন্ট জুয়ান কার্লোস ভেরেলা।
প্যান্ডোরা পেপার্সর তালিকায় বর্তমান সরকার প্রধানদের মধ্যে রয়েছেন, আইভরি কোস্টের প্রধানমন্ত্রী প্যাট্রিক আচি, চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেজ বাবিচ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের আমির শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম, লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি।
এছাড়া সাবেক সরকার প্রধানদের মধ্যে রয়েছে, যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার, ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বার্লুসকোনি, হংকংয়ের সাবেক প্রধান নির্বাহী তুং চি-ওয়া, হংকংয়ের সাবেক প্রধান নির্বাহী লিউং চুন-ইং।
এই তালিকায় রাজনীতিকদের মধ্যে রয়েছে, হন্ডুরাসের রাজধানী টেগুসিগাল্পার বর্তমান মেয়র নাসরি আসফুরা, জেরুজালেমের সাবেক মেয়র এবং নেসেটের বর্তমান সদস্য নীর বরকত, ব্রাজিলের সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রবার্তো ক্যাম্পোস নেটো, মেক্সিকোর যোগাযোগ ও পরিবহন মন্ত্রী জর্জ আর্গানিস দিয়াজ লিয়াল, আর্জেন্টিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট মরিসিও ম্যাক্রির পরামর্শক জাইম ডুরান বারবা, ব্রাজিলের অর্থমন্ত্রী পাওলো গুয়েডেস, নেদারল্যান্ডসের অর্থমন্ত্রী এবং ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক আপিলের নেতা ওপকে হোয়েকস্ত্রা, বেলগ্রেডের সাবেক মেয়র ও অর্থমন্ত্রী সিনিসা মালি, আর্জেন্টিনার সাবেক ফার্স্ট লেডি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট কার্লোস মেনেমের মেয়ে জুলেমা মারিয়া ইভা মেনেম, আর্জেন্টিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট নেস্টর কিরচনার সচিব ড্যানিয়েল মুনোজ, ইসরায়েলের সাবেক ভাইস প্রধানমন্ত্রী ও নেসেটের সাবেক সদস্য হাইম রামন, মেক্সিকোর সাবেক প্রেসিডেন্ট ম্যানুয়েল লোপেল ওব্রাডোরের সাবেক উপদেষ্টা জুলিও স্কেরারা ইবারা, পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী শওকত তারিন, মালয়েশিয়ার সাবেক অর্থমন্ত্রী দাইম জয়নুদ্দিন, ফিলিপাইনের পরিবহনমন্ত্রী আর্থার তুগাদে, ফিলিপাইনের নির্বাচন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এবং সুশাসন সংক্রান্ত প্রেসিডেন্ট কমিশনের চেয়ারম্যান আন্দ্রেস ডি. বাতিস্তা, কাজাখস্তানে নিযুক্ত ফিলিপাইনের কনসাল এবং ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের সহযোগী ব্যবসায়ী ডেনিস উ, শ্রীলঙ্কার পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনবিষয়ক সাবেক উপমন্ত্রী নিরুপমা রাজাপাকসে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: