মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন মিস মিয়ানমার হান লায় (২২)। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত সুন্দরী প্রতিযোগিতার আসর ‘মিস গ্র্যান্ড ইন্টারন্যাশনালের’ জমকালো আয়োজনে অংশ নিয়ে জান্তাবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন মিয়ানমার-সুন্দরী হান লায়।
বক্তব্যে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবি করেন তিনি। এজন্য তিনি আন্তর্জাতিক সাহায্যও কামনা করেছেন। যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে এসব কথা বলা হয়েছে।
গত ২৭ মার্চ সুন্দরী প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠানের দিনই মিয়ানমারজুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর দমন-পীড়নে শতাধিক বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়। গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে চলমান আন্দোলনে সেদিনই ছিল এক দিনে নিহতের সর্বাধিক সংখ্যা। দেশটিতে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছেন মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী জনগণ।
সুন্দরী প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের বক্তৃতায় নিজের দেশের পরিস্থিতি নিয়ে অশ্রুসিক্ত বর্ণনা দেন এই সুন্দরী। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় মিয়ানমারের পাশে থাকার জন্য বিশ্ববাসীকে আহ্বান জানান তিনি।
ব্যাংককে হান লায় বলেন, ‘আমার দেশের মানুষ গণতন্ত্র চায়। তারা গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিচ্ছে। এই প্রতিযোগিতার এই মঞ্চ থেকে আমি সারা বিশ্বের সামনে তাদের সেই ন্যায্য দাবিকে তুলে ধরতে চাই। আমি আপনাদের সবার কাছে সহযোগিতা চাই।’
দেশের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলাকে দায়িত্ব হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অং সান সু চি আমার অনুপ্রেরণার মহান উৎস।
সদ্য স্নাতক শেষ করা হান লায় বিমানবালা হতে চান। সেজন্য প্রশিক্ষণও নিয়েছেন তিনি। কিন্তু এখন বিকল্প চিন্তাও মাথায় আসছে তাঁর। অনেকে রাজনীতিতে আসতেও বলছেন, যদিও এতে মন সায় দিচ্ছে না তাঁর। তবে নিজের অবস্থান ও মতামত ব্যক্ত করার ক্ষেত্রে কোনোভাবেই পিছপা হবেন না বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হান লায়।
চলমান আন্দোলনে নিরাপত্তা বাহিনীর দমন-পীড়ন নিয়ে সুন্দরী প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানে হান লায় বলেন, ‘এগুলো মানবতা বিরোধী অপরাধ, যে কারণে আমরা জাতিসংঘকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা আমাদের নেতাদের ফেরৎ চাই এবং দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই।’
থাইল্যান্ডে সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যাওয়ার আগে গতমাসে রাজপথে অবস্থান নিয়ে সরব ছিলেন মিয়ানমারের এই সুন্দরী। নিকটজনদের অনেকেই তাঁকে দেশে ফিরতে মানা করছেন।
নিকটজনদের দুশ্চিন্তা অমূলক নয়। গত সপ্তাহে ১৮ জন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সেলিব্রেটি ও দুই সাংবাদিকের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। সামরিক বাহিনীর সদস্যদের আনুগত্য ভঙ্গের উসকানি দেওয়ার অভিযোগ আনা হচ্ছে তাঁদের বিরুদ্ধে।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী গত ১ ফেব্রুয়ারি দেশটির বেসামরিক নেত্রী অং সান সুচিকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে বন্দি করে। এরপর থেকে সেখানে চলছে জান্তাবিরোধী রক্তক্ষয়ী প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে মিয়ানমারে এ পর্যন্ত ৫০০ জনের বেশি আন্দোলনকারীকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন এবং তাঁদের এক-চতুর্থাংশের মাথায় গুলি করা হয়েছিল। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এসব তথ্য জানিয়েছে। নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩০ শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে সেভ দ্য চিলড্রেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: