ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর শাসনের অবসান করে নতুন জোট সরকারের পক্ষে ভোট দিয়েছে দেশটির আইন পরিষদ নেসেট।
রোববার নেসেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা মধ্যপন্থী ইয়ায়ির লাপিদ ও রক্ষণশীল নাপতালি বেনেতের জোট সরকারের পক্ষে ভোট দেন।
এর আগে স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় নেসেটের অধিবেশন শুরু হয়। নেসেট অধিবেশনে ৬০ জন সদস্য জোট সরকারের পক্ষে ভোট দেয়। অপরদিকে ৫৯ জন বিপক্ষে ভোট দেয় ও একজন ভোট দানে বিরত থাকেন।
আস্থাভোটে জয়ের পর সমঝোতা অনুযায়ী নাফতালি বেনেত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
লাপিদ ও বেনেতের এই জোটে রক্ষণশীল, মধ্যপন্থী ও উদার, সকল ধারার রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে। এ ছাড়া ইসরাইলের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সংখ্যালঘু আরব ফিলিস্তিনি নাগরিকদের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে নব গঠিত ইসরাইলের এই জোট সরকারে।
নেসেটের সদস্যদের আস্থাভোটে জোট সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করায় দেশটির দীর্ঘ দিনের প্রধানমন্ত্রী রক্ষণশীল লিকুদ দলের প্রধান বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর শাসনের অবসান হলো। ২০০৯ থেকে টানা ১২ বছরসহ মোট ১৫ বছর তিনি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ইয়ায়ির লাপিদের ইয়েশ আতিদ ও নাফতালি বেনেতের ইয়ামিনা দল ছাড়াও প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গান্টজের মধ্যপন্থী ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট, অ্যাভিগদর লিবারমানের রক্ষণশীল ইসরাইল বেইতেইনু, মিরেভ মিশেইলির নেতৃত্বের মধ্য-বামপন্থী লেবার পার্টি, গিদন সারের নেতৃত্বের মধ্য-ডানপন্থী নিউ হোপ পার্টি, নিৎজান হরোউৎজের বামপন্থী মেরেৎজ ও মানসুর আব্বাসের নেতৃত্বের আরব-ইসরাইলিদের রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড আরব লিস্ট এই জোটে রয়েছে।
নেতানিয়াহু তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে লাপিদ-বেনেতের জোট সরকার গঠনের বিরোধিতা করে আসছিলেন। জোট গঠনের মাধ্যমে নেতানিয়াহু পরবর্তী সরকার গঠনের এই চেষ্টাকে নির্বাচনী জালিয়াতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। ক্ষমতায় টিকে থাকতে জোটে থাকা সাবেক মিত্রদের প্রধানমন্ত্রীত্বসহ বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়ে আসছেন তিনি।
তবে ইসরাইলে এই সরকার পরিবর্তনে কোনো উৎসাহ নেই ফিলিস্তিনিদের। তাদের মতে, নতুন প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেত ইসরাইলে নেতানিয়াহুর রক্ষণশীল নীতিই অব্যাহত রাখবেন।
এদিকে নেতানিয়াহুর শাসনের অবসান উদযাপন করছে তার বিরোধীরা। তেলআবিব, পশ্চিম জেরুসালেমসহ ইসরাইলের বিভিন্ন শহরে বিরোধীরা নেতানিয়াহুর সরকার পতনের খবর শোনার সাথে সাথে নেচে গেয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন।
ইসরাইলের গত নির্বাচনগুলোতে কোনো পক্ষই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। এই নিয়ে দেশটিতে চরম রাজনৈতিক সংকট বজায় রয়েছে।
ইসরাইলে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় গত ২৩ মার্চ দুই বছরের মধ্যে চতুর্থ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এই নির্বাচনেও কোনো দল বা জোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়। দেশটিতে সরকার গঠনের জন্য ১২০ আসনবিশিষ্ট আইন পরিষদ নেসেটের ৬১ সদস্যের সমর্থনের প্রয়োজন হয়।
প্রথম দফা আলোচনার পর নেসেটের ৫২ সদস্য প্রধানমন্ত্রী পদে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সুপারিশ করায় এপ্রিলের শুরুতে তাকে সরকার গঠনের জন্য প্রথম মনোনয়ন দেন ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট রিওভেন রিভলিন। সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জিত না হলেও ওই সময় এটিই ছিল সর্বোচ্চ মনোনয়ন। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে নেতানিয়াহুকে সমর্থন করা জিউনিস্ট পার্টি কোনো আরব দলের সাথে সরকার গঠনের অস্বীকৃতি জানানোয় তিনি সরকার গঠনে ব্যর্থ হন।
নেতানিয়াহুর ব্যর্থতার পর ৫ মে নতুন করে নেসেট সদস্যদের সাথে আলোচনা করেন প্রেসিডেন্ট রিভলিন। নতুন আলোচনায় রক্ষণশীল ইয়ামিনা পার্টির প্রধান নাফতালি বেনেতের সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগির এক প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে মোট ৫৬ সদস্যের সুপারিশ পান ইয়েশ আতিদ দলের প্রধান ইয়ায়ির লাপিদ।
২ জুন সরকার গঠনে নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার সামান্য আগে ইয়ায়ির লাপিদ সরকার গঠনের ঘোষণা দেন। নাফতালি বেনেতের ইয়ামিনা দল ও অন্য আরো ছয়টি দলের সাথে দীর্ঘ আলোচনা শেষে সমঝোতার পর তিনি সরকার গঠনের এই ঘোষণা দেন।
সমঝোতা অনুসারে ইসরাইলের নতুন গঠিত হতে যাওয়া সরকারের চার বছরের মেয়াদের প্রথম দফায় দুই বছর বেনেত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। পরে শেষ দুই বছরের জন্য ইয়ায়ির লাপিদ তার কাছ থেকে সরকারের নেতৃত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
সূত্র : আলজাজিরা ও হারেৎজ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: