ইসরায়েল দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে বুধবার তীব্র হামলা চালিয়েছে। জাতিসংঘ বলেছে, তাদের একটি আশ্রয় কেন্দ্রে ট্যাংকের গোলাবর্ষণে নয়জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহল নিন্দা জানিয়েছে।
জাতিসংঘ এ ঘটনায় যুদ্ধের নিয়মের ‘স্পস্ট লংঘনের’ জন্য নিন্দা জানিয়েছে।
দক্ষিণ গাজার সবচেয়ে বড় শহরে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়কেন্দ্রে হামলার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা হামাসের গাজা প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের জন্মস্থান খান ইউনিসকে ঘিরে রেখেছে।
সেনাবাহিনীর প্রকাশিত ফুটেজে ইসরায়েলি সৈন্যদের শহরের ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনগুলোর মধ্যে যুদ্ধরত দেখা যায়। এএফপি’র ছবিতে দেখা যায় ইসরায়েলি ব্যাপক বোমা হামলায় কালো ধোঁয়ার বিশাল মেঘ খান ইউনিসের আকাশ ঢেকে ফেলেছে।
গাজায় উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘ সংস্থার প্রধান টমাস হোয়াইট বলেন, জাতিসঙ্ঘের আশ্রয় কেন্দ্রে ট্যাংক থেকে হামলা চালানো হয়েছে। এতে ৯ জন নিহত এবং ৭৫ জন আহত হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রটিতে ৮০০ জন লোক বাস করছে।
জাতিসংঘ সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) প্রধান ফিলিপ লাজারিনি এই হামলার নিন্দা করে নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন।
ল্যাজারিনি এক্স-এ বলেছেন, ইসরায়েল ‘নির্লজ্জভাবে আরও একবার যুদ্ধের মৌলিক নীতি উপেক্ষা করেছে।’
পূর্বে টুইটারে বলেছেন, আশ্রয় কেন্দ্রটি স্পষ্টভাবে জাতিসংঘের কেন্দ্র হিসেবে হিসাবে চিহ্নিত ছিল এবং এর অবস্থান সম্পর্কে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছিল।
ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এএফপিকে বলেছে, ‘অভিযানটির একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা চলছে।’ হামাসের হামলার জবাবে এই হামলা’র সম্ভাবনা যাচাই করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেছেন, ‘বেসামরিকদের অবশ্যই সুরক্ষিত করতে হবে এবং জাতিসংঘের সুরক্ষিত সুযোগ-সুবিধাকে সম্মান করতে হবে।’
এদিকে খান ইউনিসের হাসপাতালের কাছে ভয়ংকর লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে। জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা (ওসিএইচএ) বলেছে, আল-আকসা, নাসের এবং আল-আমল হাসপাতাল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বাসিন্দারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে বলে রিপোর্ট পাওয়া গেছে।
‘চলমান বোমা হামলার কারণে (নাসের হাসপাতালে) কেউ প্রবেশ বা বের হতে পারবে না।’ উল্লেখ করে চিকিৎসকদের উদ্ধৃত করে ওসিএইচএ বলেছে, বিপুল প্রাণহানির কারণে কর্মীরা হাসপাতালটির চত্বরে কবর খনন করছে।
ওসিএইচএ জানিয়েছে, নিজেদের বাড়িঘর থেকে উৎখাত হওয়া প্রায় ১৮,০০০ মানুষ নাসের হাসপাতালে আশ্রয় নিতে পারে।
একজন এএফপি সাংবাদিক খান ইউনিস থেকে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহ’তে ফিলিস্তিনিদের পালিয়ে আসতে দেখেছেন, পিকআপ ট্রাকে তাদের জরুরি সামগ্রী নিয়ে আসছেন।
হামাস পরিচালিত ভূখন্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতরাত থেকে গাজার হাসপাতালগুলো ইতিমধ্যেই অন্তত ১২৫ জনের মৃতদেহ পেয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েল এ পর্যন্ত গাজায় কমপক্ষে ২৫,৭০০ লোককে হত্যা করেছে, যাদের ৭০ শতাংশ নারী এবং শিশুরা। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার যুদ্ধের অবসান ঘটাতে ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে রয়েছে।
অন্যদিকে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে শুক্রবার যুগান্তরকারী রায় দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সোমবার গাজায় ২৪ সৈন্য নিহত হওয়ার পর ইসরায়েলের ভেতরে তীব্র চাপের মুখে পড়েছে নেতানিয়াহুর সরকার।
গাজায় স্থল অভিযান শুরুর পর থেকে এটি সেনাবাহিনীর সবচেয়ে মারাত্মক এক দিন।
ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের উদ্বৃত করে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ২১ জন নিহত হয়েছে।
তবে বুধবার ইসরায়েলি পার্লামেন্টে ভাষণে নেতানিয়াহু এই প্রতিশ্রুতি দেন, হামাসের ‘আগ্রাসন বন্ধ ও অশুভ শক্তি ধ্বংস’ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলতে থাকবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: