গাজায় প্রতিদিনই চলছে ইসরাইলি বোমা হামলা। এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। আহতের সংখ্যা ৫০ হাজারেরও বেশি। এমন পরিস্থিতিতে গাজায় মানবিক ত্রাণ সহায়তা বাড়াতে শুক্রবার একটি প্রস্তাব পাশ করেছে জাতিসংঘ। এতেই বিশ্বজুড়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। যুদ্ধ অব্যাহত রেখে অঞ্চলটিতে এমন ত্রাণ সহায়তা কোনো সমাধান নয়।
যখন ইসরাইলি বোমা হামলা বেসামরিকদের বাড়িঘর, কল-কারখানা, খামার ও বেকারি ধ্বংস করছে তখন গাজায় কোনো সহায়তাই কাজ করবে না। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান অক্সফাম আমেরিকার মানবিক নীতির প্রধান স্কট পল শনিবার আলজাজিরাকে এ কথা বলেছেন। গাজায় প্রকৃতপক্ষে কী প্রয়োজন তা নিয়ে বাইডেন প্রশাসন ও বাকি বিশ্বের মধ্যে একটি ‘বিস্তৃত ফারাক’ রয়েছে বলে জানান তিনি। কারণ, বেশিরভাগ দেশই গাজায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিকে সমর্থন করলেও যুক্তরাষ্ট্র এই ধরনের পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে।
স্কট পল আরও বলেন, ‘আপনি যদি রুটি সেঁকতে না পারেন তাহলে ময়দা আনার কোনো মানে হয় না। সহায়তা বিতরণের প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে একটি সমস্যা সমাধান করা উচিত।’
এর আগে গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব তুলেছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। প্রথমে তাতে গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়ানোসহ ‘অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ’র আহ্বানের কথা উল্লেখ ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোতে জাতিসংঘে এই প্রস্তাব পাশ করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সময়ে ভোট গ্রহণের তারিখও বেশ কয়েকবার পেছানো হয়েছে। এরপর গত কয়েক দিনে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে প্রস্তাবের ভাষায় বেশ কাটছাঁট করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত পাশ হওয়া প্রস্তাবে ‘যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান’ কথাটি এড়িয়ে ‘যুদ্ধ বন্ধে উপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরি’র আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশ হওয়া প্রস্তাবটিতে গাজায় ‘নিরাপদে ও বাধাহীনভাবে পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ করে দিতে’ চলমান সংঘাতে জড়িত সব পক্ষের প্রতি আহ্বানের কথা উল্লেখ ছিল।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাশ হওয়া এই প্রস্তাবটিতে গাজা সংকট মোকাবিলায় মূল পদক্ষেপই নেই বলে জানিয়েছে জরুরি চিকিৎসা সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (মেডিসিনস সানস ফ্রন্টিয়ার্স বা এমএসএফ)। যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক এভ্রিল বেনয়েট এক বিবৃতিতে বলেন, ‘জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত এমন পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে যে গাজার বেসামরিক মানুষের জীবনের ওপর এর প্রভাব প্রায় অর্থহীন হবে।’ এ বিষয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এক্সে দেওয়া একটি পোস্টে বলেন, জাতিসংঘে পাশ হওয়া এই প্রস্তাব হয়তো ত্রাণ বিতরণকে উন্নত করতে পারে কিন্তু গাজায় সাধারণ মানুষের দুর্দশা কমানোর একমাত্র উপায় ‘একটি মানবিক যুদ্ধবিরতি’।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান ট্রেড্রোস আধানম গেব্রেইসাস এ প্রস্তাবকে স্বগত জানিয়ে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। প্রসঙ্গত, গাজায় মানবিক ত্রাণ সহায়তা বৃদ্ধিতে জাতিসংঘের সম্মতির পরও শনিবার গাজার উত্তর থেকে দক্ষিণ- সবখানেই হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল।
ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম সংস্থার পরিচালক থমাস হোয়াইট বলেন, ‘আমাদের একটি যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন, যা গাজায় বেসামরিক লোকদের হত্যা থেকে শুরু করে বেসামরিক অবকাঠামোর ধ্বংস বন্ধ করবে।’
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: