ফিলিস্তিনে টানা আট দিন ধরে বিমান হামলা ও বোমাবর্ষণ করে চলেছে ইসরায়েল। নির্বিচারে হত্যা করছে নারী, শিশুসহ বেসামরিক লোকজনকে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত করছে গোটা গাজা নগরীকে। উগ্র জায়ানবাদীদের আক্রমণ থেকে বাদ যাচ্ছে না দাতব্য কার্যক্রম, মিডিয়া কার্যালয়, আবাসিক ভবন। এমনকি স্কুল ও হাসপাতালেও টানা বিমান হামলা চালাচ্ছে তারা।
হত্যাযজ্ঞে মত্ত ইসরায়েল সব শেষ সোমবার গাজায় অবস্থিত কাতারের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (কিউআরসিএস) কার্যালয়ে হামলা চালায়। বিমান হামলা থেকে রক্ষা পায়নি গাজার প্রধান করোনা টেস্ট সেন্টার। এতে বন্ধ হয়ে গেছে ওই হাসপাতালের কার্যক্রম। এ আগ্রাসনকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বর্ণনা করছেন মানবাধিকার সংগঠনসহ আইনজ্ঞরা। খবর এএফপি, রয়টার্স ও আলজাজিরার।
সোমবার কিউআরসিএসের কার্যালয়ে ইসরায়েলের বিমান হামলায় দুই ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ১০ জন আহত হয়েছেন। কিউআরসিএসের সেক্রেটারি জেনারেল আলী বিন হাসান আল হামদানি ওই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এটা পরিস্কারভাবে জেনেভা কনভেনশনের লঙ্ঘন। ইসরায়েল এই কনভেনশনের অন্যতম স্বাক্ষরকারী।
রেড ক্রিসেন্ট ভবনে ইসরায়েলি দখলদারদের হামলার নিন্দা জানিয়েছে কাতারও। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, 'মানবিক এবং সংবাদ প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যবস্তু বানানো পরিস্কারভাবে আন্তর্জাতিক আইন, মানবিকতা এবং মূল্যবোধের লঙ্ঘন।' ইসরায়েলি আগ্রাসনের মধ্যেও গাজায় ফিলিস্তিনিদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রেখেছে কিউআরসিএস।
ইসরায়েল শুধু দাতব্য প্রতিষ্ঠান নয়, স্কুল, হাসপাতাল, এতিমখানায়ও নির্বিচারে বিমান হামলা চালাচ্ছে। গাজার প্রধান করোনা টেস্ট সেন্টারে বিমান হামলার পর সোমবার রাতে হামাস জানিয়েছে, হামলায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হাসপাতালটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে, বোমা হামলায় ফিলিস্তিনের গাজা এলাকার কমপক্ষে ৩১টি স্কুল ও বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, এ সহিংসতার ফলে গাজায় সব ধরনের শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। গাজার ২৪ হাজার শিক্ষার্থীর পড়াশোনা এখন বন্ধ।গত সপ্তাহে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহত ২১২ ফিলিস্তিনির মধ্যে ৬১ জন শিশু রয়েছে। এর আগে শনিবার বিমান হামলা চালিয়ে গাজায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার হওয়া একটি ভবন গুঁড়িয়ে দেয় ইসরায়েল।
ইসরায়েলের এসব বিমান হামলাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন আইনজ্ঞরা। কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আরদি ইমসেইস বলেছেন, গাজা উপত্যকার অসমর্থিত বাহিনীর মোকাবিলায় ইসরায়েল যা করছে, তা সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ। তিনি বলেন, 'ইসরায়েল প্রাথমিকভাবে স্বাতন্ত্র্য, আনুপাতিকতা ও সতর্কতার নীতিগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের মাধ্যমে যে যুদ্ধাপরাধ করছে, তা বিশ্বাস করার মতো বিশ্বাসযোগ্য কারণ রয়েছে।'
এর আগে ইসরায়েলি আগ্রাসনকে মানবাধিকার লঙ্ঘন আখ্যা দিয়েছেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিষয়ক পরিচালক সালেহ হিজাজি। তিনি বলেন, গাজার মানুষের ওপর এবং ওই অঞ্চলে কী করা হচ্ছে, সে বিষয় গোপন করার চেষ্টা করছে ইসরায়েল। আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে বিষয়টি তদন্ত করার আহ্বান জানাই। যেভাবে সেখানে ভবনে হামলা চালানো হচ্ছে, তা এক ধরনের যুদ্ধাপরাধ।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: