স্মৃতি সংরক্ষণের সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম হচ্ছে ফটোগ্রাফি কিংবা আলোকচিত্র। ছবি যে কথা বলে তা নিয়ে সংশয়ের কোনো অবকাশ নেই। তবে ছবির মাধ্যমে কথা বলার কঠিন কাজটি করতে হয় আলোকচিত্রীকে। মানুষের জীবনধারায় এখন এসে উপস্থিত হয়েছে অসংখ্য প্রয়োজন এবং অগণিত বৈচিত্র্য । সেই প্রয়োজন পূরণের প্রতিযোগিতায় জীবনের চেহারা পাল্টে গেছে। ফটোগ্রাফি বর্তমানে অনেকেরই একটি অন্যতম শখ। ছবির মাধ্যমে একদিকে যেমন শিল্পীর সাধনা চলে, অন্যদিকে তেমনি অনেক প্রয়োজনীয় তথ্যও সংগৃহীত ও সংরক্ষিত হয়। ছবি ইতিহাসেরও ধারক। একজন ফটোগ্রাফার শিল্পী ও মনোযোগী গবেষক। তিনি অনুভব, অনুভূতির দৃশ্য সন্ধান করেন আর পেলেই তা ক্যামেরা বন্দী করেন। অন্যদিকে ছবির মাধ্যমে অনেক জ্ঞানের তথ্যও সংরক্ষিত হয়। একালের জ্ঞানচর্চায় আলোকচিত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ফটোগ্রাফি একটি অভিনব শিল্প। জীবনের অভিজ্ঞতাকে অনেক সময় ফটোবন্দী রাখা সম্ভব। ফটোগ্রাফির মাধ্যমে সমাজ, রাষ্ট্র ও ব্যক্তিগত জীবনের অনেক ঘটনাবহুল সময়কে ধারণ করে রাখার সুযোগ থাকে। এছাড়াও প্রকৃতির সৌন্দর্য, জনমানুষের জীবনধারা ছাড়াও সকল বিষয় ধারণের জন্যও ফটোগ্রাফি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। জীবনের নানা সময়ে আলোকচিত্র গ্রহণ ও সংগ্রহ করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এছাড়া ফটো শিল্প অতীতে স্মৃতিকে হারিয়ে যেতে দেয় না। এক্ষেত্রে ফটোগ্রাফি সবার জন্যই খুবই প্রয়োজনীয় মাধ্যম।
ফটোগ্রাফিকে সকলের নিকট পৌছে দিতে এবং আলোকচিত্রের মাধ্যমে দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জনমানুষের জীবনধারা ছাড়াও বিভিন্ন বিষয় জনসাধারণের মাঝে তুলে ধরার লক্ষ্যে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফটোগ্রাফিক সোসাইটি গত ২৪ নভেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অধীনে ৩নং ওয়ার্ড, মিরপুর-১৩ এর জল্লাদখানা বধ্যভূমি সংলগ্ন মুক্তির সবুজায়ন প্রকল্প পার্কে দিনব্যাপী একটি উন্মুক্ত আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে। সর্বস্তরের দর্শকরা এই প্রদর্শনী উপভোগ করেন। আলোকচিত্র প্রদর্শনীটিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ধারণকৃত আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হয়। উক্ত আয়োজন তরুণ শিক্ষার্থী ও আলোকচিত্রিদের মাঝে আলোকচিত্র গ্রহনও শিল্পের বিস্তারে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। ছবিগুলো দেশের রুপ বৈচিত্রসহ মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে। এ বিষয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রধান কার্যনির্বাহক আলোকচিত্রী সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, 'ফটোগ্রাফিকে সর্বস্তরের মানুষের নিকট ছড়িয়ে দিতে এবং মানুষের মাঝে ফটোগ্রাফির প্রতি ভালোবাসা বাড়াতেই এ আয়োজন, যার মাধ্যমে মানুষ যেমনি ফটোগ্রাফিকে জানতে পারবে তেমনি ফটোগ্রাফির মাধ্যমে গোটা বিশ্বের কাছে আমাদের দেশকে তুলে ধরতে পারবে।' সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রিফাত রায়হান জানান, ভবিষ্যতে দেশের বিভিন্ন জেলায় এমন প্রদর্শনীর আয়োজন করার উদ্যোগে নেয়া হচ্ছে। প্রদর্শনীটির সার্বিক সহোযোগিতায় ছিলো ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং প্রদর্শনী সফলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এর সহযোগিতা পাওয়া যায়।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফটোগ্রাফিক সোসাইটি একটি অবৈতনিক সংগঠন। উক্ত সংগঠন তরুণ আলোকচিত্রিদের মাঝে আলোকচিত্র গ্রহণের মাধ্যমে দেশের সৌন্দর্য, ঘটনাবলি, তথ্যচিত্র ইত্যাদি গোটা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে উদ্বুদ্ধ করে। এছাড়াও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের আলোকচিত্র গ্রহণের জ্ঞান ও মানোন্নয়নের মাধ্যমে মানব হতে মানবসম্পদে পরিণত করার লক্ষ্যে কাজ করে। উক্ত সংগঠনটি বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার আলোকচিত্র বিষয়ক কর্মশালা ও উন্মুক্ত আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে থাকে। সংগঠনটি মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত সুস্থ মানসিকতার তরুণসমাজ গঠনের লক্ষ্যে শিল্পকে বিকশিত করার পথ হিসেবে ফটোগ্রাফি চর্চার বিষয়টি সকলের নিকট তুলে ধরছে।
আলোকচিত্রী সাজ্জাদুল ইসলামের ভাষায়, "সকলের মাঝে ফটোগ্রাফি হয়ে উঠুক কোন অব্যক্ত গল্পের স্তব্ধতার বহিঃপ্রকাশ।"
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: