করোনাভাইরাস ধ্বংসকারী নাকের স্প্রে উদ্ভাবনের দাবি করেছে বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টসের (বিআরআইসিএম) গবেষকরা। তারা এই ওষুধের নাম দিয়েছেন ’বঙ্গসেফ ওরো- ন্যাজাল স্প্রে’।
তিনটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ৪৮৮ জন রোগীর ওপর এই সমীক্ষা চালানো হয়। তারা সবাই করোনা পজিটিভ ছিলেন। তবে পজিটিভ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের বিআরআইসিএমের ‘বঙ্গসেফ ওরো-ন্যাজাল’ স্প্রে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়।
এর আধা ঘণ্টার মধ্যেই তাদের করোনা পরীক্ষা করা হয় এবং তাদের করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। বিআরআইসিএমের রিপোর্টে বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
এদিকে, সংস্থার মহাপরিচালক ড. মালা খান এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট সরকারের ‘বালাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলে (বিএমআরসি) দাখিল করেছেন। ২২ মে দাখিল করা রিপোর্টের সঙ্গে রোগীদের ওপর পরিচালিত সমুদয় তথ্যউপাত্ত সংযুক্ত করে দেন। রিপোর্টে ৪৮৮ জন করোনা পজিটিভ রোগী ছাড়াও ১০ জন সুস্থ সবল মানুষের ওপর স্প্রে প্রয়োগ করা হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এই স্প্রের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কিনা তা নিশ্চিত হতেই দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা চালানো হয়। তাতে দেখা যায়, ওই ১০ জনের কারোরই কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি। বরং সবাই স্প্রে ব্যবহার করে উপকৃত হয়েছেন। ঠান্ডাজনিত কারণে যাদের নাক বন্ধ থাকে বা শ্বাস ফেলতে সমস্যা হয় তাদের নাক থেকে সর্দির পানি বের হয়ে তারা স্বস্তিবোধ করেন।
এ বিষয়ে বিআরআইসিএমর মহাপরিচালক ড. মালা খান বলেন, বিএমআরসি আমাদের রিপোর্ট গ্রহণ করেছে। এখন তাদের কাছ থেকে অনুমতি পেলে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে উৎপাদনে যেতে পারব।
তিনি জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ৪৮৮ জন করোনা পজিটিভ রোগীর ওপর তারা গবেষণা করেছেন।
ড. মালা খানের তত্ত্বাবধানে বিজ্ঞানসম্মত ও বাস্তব প্রয়োগ কাজে ঢাকা মেডিকেলের নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ডা. মোস্তফা কামাল আরেফিন, ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুলতানা সাহানা বানু, বিজ্ঞানী মো. মনিরুজ্জামান, মাহমুদুজ্জামান রাজু, সাবিহা কামালসহ বিআরআইসিএমর একদল তরুণ বিজ্ঞানী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
ড. মালা খান জানান, আমরা জনস্বার্থে এই স্প্রে আবিষ্কার করেছি। গত বছরের মার্চে শুরু হয় এই গবেষণা কার্যক্রম। এক বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করার পর আমরা সেম্পল তৈরি করি। তা পরীক্ষামূলকভাবে আমরা প্রথমে ব্যবহার করি। এরপর তিনটি হাসপাতালে রোগীদের তা ব্যবহার করি টেস্ট কেস হিসাবে। ২ ফোঁটা করে ড্রপ নাকে ও মুখে ওই ৪৮৮ জন পজিটিভ রোগীকে দেওয়া হয়। এর আধা ঘণ্টা পর পরীক্ষা করে ৮৫.০৬ ভাগ রোগীর রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। তিনি জানান, প্রতিটি স্প্রের উৎপাদন মূল্য ১০০ টাকা। এটি জনগণের জন্য বড় ধরনের সেবা। এই করোনায় মানুষ দিশেহারা।
তাদের এ মুহূর্তে এই সেবাটা বিশেষভাবে দরকার। অনেক ওষুধ কোম্পানিও এটি উৎপাদন করতে চায় জানিয়ে তিনি বলেন, তারা ব্যবসার জন্য ঘুরছে। কিন্তু আমরা চাই জনগণ ১০০ টাকায় এই সেবাটি পাক। আমরা এটির উৎপাদন মূল্য (এমআরপি) ১০০ টাকা নির্ধারণ করে দেব। প্রতিদিন অন্তত ১ লাখ পিস স্প্রে বা ওরো-ন্যাজাল ড্রপ তার প্রতিষ্ঠান উৎপাদন করতে পারবে জানান তিনি। এছাড়া করোনা টেস্ট কিটও তার প্রতিষ্ঠান তৈরি করছে বলে জানান। যা অনুমোদন সাপেক্ষে আগামী ৬ মাসের মধ্যে বাজারে দেওয়া সম্ভব। বর্তমানে সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রতিটি প্রায় ২০০০ টাকা করে করোনার পিসিআর টেস্ট কিট সংগ্রহ করছে। কিন্তু বিআরআইসিএমর প্রতিটি টেস্ট কিটের মূল্য পড়বে ৫০০/৬০০ টাকা। এতে সরকারের অর্থ সাশ্রয় হবে। সরকার টু সরকার যদি কিট বা স্প্রে কেনা হয় তাতে সরকারের প্রতিষ্ঠানই আর্থিকভাবে লাভবান হবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: