অতিমারি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে চলতি জুলাই মাসের প্রথম ৫ দিনে ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবারও ৭ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আগের দিন সোমবার ১২ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছিল। এ নিয়ে জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলে মৃত্যুও বেড়ে যাবে।
গত জুন মাসের শুরুতেও নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার কম ছিল। এরপর ধীরে ধীরে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। এখন প্রায় প্রতিদিন শনাক্তের হার ১৫ শতাংশের বেশি থাকছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) শনাক্তের হার ছিল ১৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ। অর্থাৎ করোনার উপসর্গ নিয়ে ১০০ জন নমুনা পরীক্ষা করালে অন্তত ১৬ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
কোরবানির ঈদের এই সময় সংক্রমণ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহর, জেলা শহর, উপজেলা সদরে পশুর হাট বসছে। এসব হাটে মানুষের ভিড় বাড়বে। এ ছাড়া ঈদের ছুটি সামনে রেখে গণপরিবহনে ভিড় বাড়ছে, আগামী তিন–চার দিনে তা আরও বাড়বে। কিন্তু মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে উদাসীনতা থাকায় ঈদের এই সময়ে সংক্রমণ সারা দেশে আরও ছড়াবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে দেশের ৫০টির বেশি জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরামর্শক মুশতাক হোসেন বলেন, ‘গত সপ্তাহে আইইডিডিআরসহ ঢাকার দু–একটি কেন্দ্রে নমুনা পরীক্ষার যে ভিড় দেখা গেছে, এ সপ্তাহে তা বাড়েনি। এ থেকে এটা অনুমান করা অযৌক্তিক হবে না যে ঢাকায় সংক্রমণ কিছুটা স্থিতিশীল আছে, বাড়লেও কম বাড়ছে। সংক্রমণ বাড়ছে ঢাকার বাইরে।’
জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, রাজধানীর বাইরে চট্টগ্রামে সামাজিক সংক্রমণ আগেই ঘটেছে। আরও দু–একটি জেলায় সেটি ঘটে থাকতে পারে। সামাজিক সংক্রমণ যদি দেশের অধিকাংশ স্থানে ছড়িয়ে পড়ে, তবে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়বে।
সংক্রমণ কবে নাগাদ নিম্নগামী হতে পারে বা কমে আসতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে আইইডিসিআর পরামর্শক মুশতাক হোসেন বলেন, ‘জুলাই মাসের শেষ নাগাদ সেটি হতে পারে।’
রোগতত্ত্ববিদেরা বলছেন, করোনায় এখন যাঁদের মৃত্যু হচ্ছে, তাঁরা আক্রান্ত হয়েছিলেন দুই বা তিন সপ্তাহ আগে।
জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অমিক্রনের বিএ–৫ উপধরন। বাংলাদেশে এখন বিএ–৫ উপধরনের প্রদুর্ভাব চলছে। এই উপধরনে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি কি না, সে ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা এখন নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না। করোনার টিকা নেওয়ায় রোগ প্রতিরোধের যে ক্ষমতা তৈরি হয়েছে, সেই ক্ষমতাকে অমিক্রনের বিএ–৫ উপধরন ফাঁকি দিতে পারে—এমন কথা বলছেন বিজ্ঞানীরা।
তবে করোনার টিকা সংক্রমণ ঠেকাতে না পারলেও রোগের তীব্রতা কমাচ্ছে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা। টিকা পাওয়া ব্যক্তি রোগে ভুগছেন কম, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন কম হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ এ পর্যন্ত দেশের ১২ কোটি ৯৪ লাখ মানুষকে করোনার প্রথম ডোজ এবং ১১ কোটি ৯৬ লাখ মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দিয়েছে। আর তৃতীয় ডোজ বা বুস্টার ডোজ দিয়েছে ২ কোটি ৯৬ লাখ মানুষকে। পাশাপাশি ৫ থেকে ১২ বছর বয়সীদের করোনার টিকা দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জনস্বাস্থ্যবিদেরা মাস্ক পরার ব্যাপারে বারবার সতর্ক করছেন। তাঁরা বলছেন, করোনার টিকা নেওয়া থাকলেও মাস্ক না পরে ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না। অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতার কথা বলেছে সরকারও। তবে এটি কার্যকর করার দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: