ছাত্রদের চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগটি বানোয়াট বলে দাবি করেছেন সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন।
ফারহানার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ১৬ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দিয়েছেন। এই বিষয়ে প্রশাসন মঙ্গলবার তদন্ত কমিটি গঠন করলেও ফারহানাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্তের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন একদল শিক্ষার্থী।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ফারহানা বাতেন সম্প্রতি ক্লাস চলাকালে চুল বড় রাখায় ছাত্রদের বকাঝকা করেন। গত রোববার পরীক্ষার হলের দরজার সামনে তিনি কাঁচি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কক্ষে ঢোকার সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের চুল মুঠোর মধ্যে ধরা গেছে, তাদের মাথার সামনের খানিকটা তিনি কেটে দেন।
ছাত্রদের চুল কেটেছিলেন কি না- এমন প্রশ্নে ফারহানা বলেন, “না, এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমার কাছে পুরো ব্যাপারটি শুনে অবাক লেগেছে। আমি পত্রিকায় দেখেছি খবরটা। ১৬ জন মানুষের চুল কেটে দেব, কেউ দেখবে না? তারা কোনো ছবি তুলবে না? আমি কাটতে চাইলাম আর ১৬ জন আমাকে চুল কাটতে দিল, কেউ কোনো প্রতিবাদ করবে না?”
একজন ছাত্রেরও চুল কি কেটেছিলেন- প্রশ্নে তিনি বলেন, “নাহ, একজনেরও চুল কাটিনি। কারও চুলে হাতও দিইনি। এরকম ঘটনা ঘটছে কি না, এই সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই নাই। সোমবার সকালেও তারা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০০০-২০০১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফারহানা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর ২০১৮ সালে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগে যোগ দেন। পরে চেয়ারম্যানের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর এবং প্রক্টরিয়াল বোর্ডের সদস্য পদে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর মঙ্গলবার রাতে তিনি ওই তিন প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আব্দুল লতিফ জানিয়েছেন।
চুল না কাটলে কেন শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে, শিক্ষকদের দলাদলির কোনো বিষয় আছে কি না- এই প্রশ্নে ফারহানা বাতেন বলেন, “কিছু দলাদলি তো থাকেই। তবে সে কারণে হয়েছে কি না, তাও বুঝতে পারছি না। ২০১৯ সালেও একবার বিশ্ববিদ্যালয় সমস্যা হয়েছিল। তখন আমি শিক্ষকদের পক্ষে ছাত্রদের বিরুদ্ধে একটা রিট করেছিলাম। এখন সেই সব ছাত্ররাই আমার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। মূলতঃ তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরাই আন্দোলন করছে, যার সঙ্গে যুক্ত করিয়েছে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের।”
তিনি বলেন, “এখানে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি থাকতে পারে বলেও সন্দেহ করছি। কারণ একের পর এক এই যে ঘটনাগুলো ঘটে যাচ্ছে।”
ফারহানা বলেন, “যদি ধরেও নিই যে আমি চুল কেটেছি, সেটার তো তদন্ত শুরু হয়েছে। তারা তদন্ত করে কী পায় দেখা যাক। কিন্তু তার আগেই তারা ইউনিভার্সিটি থেকে আমার পদত্যাগ চাচ্ছে কেন? আমি তো নিজ থেকেই প্রক্টরশিপ, চেয়ারম্যানশিপ থেকে রিজাইন দিয়েছি। স্টুডেন্টদের কথা চিন্তা করেই এটা করেছি। তারা ছাত্র, তারা ভুল করতেই পারে। তাদের বয়স কম, তাদের প্রতি তো আমার কোনো ক্ষোভ বা রাগ নেই। আমি ধরে নিলাম যে আমি পদত্যাগ করলে ওরা যদি শান্ত হয়, তাই পদত্যাগই করলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার চাইবে কেন? আমার চাকরিটা কি মগের মুল্লুক?”
বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো বিষয় নিয়ে ঝামেলা রয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অনেকে হয়ত অনেক সময় অপরিষ্কার-অগোছালোভাবে ক্লাসে চলে আসে। অন্য ছাত্রীরা সেটার জন্য আমার কাছে কমপ্লেইন করে, তখন হয়ত কাউকে কিছু বলেছি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে থাকতে বলেছি। এতটুকুই তো!”
প্রথম বর্ষ থেকে তৃতীয় বর্ষ মিলিয়ে ওই বিভাগে একশ শিক্ষার্থী রয়েছে। আন্দোলনরতদের কয়েকজনকে মাথা ন্যাড়া অবস্থায় দেখা গেছে। একজন শিক্ষার্থী ক্ষোভে-অপমানে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন বলেও খবর ছড়িয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: