ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কলা ভবনের দক্ষিণ-পূর্ব কোণের একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। প্রশাসন জানায় গাছটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল তাই নিরাপত্তার স্বার্থে কেটে ফেলা হয়েছে। গাছ কাটাকে অযৌক্তিক দাবি করে এই গাছের পরিবর্তে ১০০ গাছ লাগানোর দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের একটি দল।
বৃহস্পতিবার(১৬ অক্টোবর) দুপুর বারোটায় কেটে ফেলা গাছটির জায়গায় একটি কৃষ্ণচূড়া রোপণ শেষে কেটে ফেলা গাছের একটি ডালকে সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে লাল রঙে রক্তাক্ত আমেজ তৈরি করে বহন করেন বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। "কৃষ্ণচূড়া কৃষ্ণচূড়া, বিপজ্জনক কৃষ্ণচূড়া" স্লোগানে মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দিক প্রদক্ষিণ করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন (বিদ্রোহী অংশ)এর সাধারণ সম্পাদক রাগীব নাঈম, মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফারজানা মীম, আইন বিভাগের কাজী রাকিব হোসাইন প্রমুখ।
সমাবেশে একশো গাছ লাগানোর দাবির পাশাপাশি আর তিনটি দাবি পেশ করেন বিক্ষোভকারীরা। দাবিগুলো হলো: এক.ভবিষ্যতে অপরিকল্পিতভাবে যেকোনো গাছ কাটা থেকে প্রশাসনকে বিরত থাকতে হবে। দুই.কেটে ফেলা গাছটির কাঠ বিক্রি করা যাবে না, এটি চারুকলা অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাজের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হবে। তিন. শিক্ষার্থীদের রোপণ করা চারাগাছটিকে সংরক্ষণ করতে হবে।
সমাবেশে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন (বিদ্রোহী অংশ)এর সাধারণ সম্পাদক রাগীব নাঈম বলেন, "যখন প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ওড়ানো হয়েছিলো, তখন ঠিক ২০০ কদম দূর থেকে এই গাছটি পতাকা ওড়ানো প্রত্যক্ষ করেছিলো। কিন্তু এই আজ কেটে ফেলা হচ্ছে ঝুঁকির কথা বলে। আমি বুঝতে পারছি না ঝুঁকিটা আসলে কী।
এ ছাড়া ক্যাম্পাসের অন্যান্য জায়গাগুলোতেও আরও গাছ কাটা হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন করোনায় আক্রান্ত হয়ে যখন অক্সিজেনের অভাব বোধ করছে, সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগ মুহূর্তে এভাবে গাছ কাটা হচ্ছে। এই গাছগুলো কাটা মানেই ইতিহাসকে কেটে ফেলা। আমরা এই ইতিহাসকে বহন করতে চাই।
তিনি আরো বলেন,"বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা কাঠ দিয়ে নানা ধরনের ভাস্কর্য বানায়। আমরা চাই এই গাছগুলো যেন বিক্রি করা না হয়। এই গাছ যেন কোনো টেন্ডারবাজের হাতে না পড়ে। বরং এই গাছগুলো চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়। এই গাছকে যেন মরণোত্তর সম্মান দেওয়া হয়।"
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী রাকিব হোসেন বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে বক্তব্য দিয়েছে, যে গাছটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো, সেটা আমরা মনে করি কোনো যৌক্তিক কথা না। আমরা গাছটাকে বহুদিন ধরে দেখছি, আজকেও গিয়ে দেখে এসে মোটেও মনে হয়নি এটা কোনভাবে ঝুঁকির কারণ হতে পারতো। বরং এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যের একটা অংশ ছিলো, যেটা নষ্ট করা হয়েছে। এতো পুরনো একটা গাছে নিজস্ব যে জীববৈচিত্র্য তৈরি হয় সেইটা আরো দশটা নতুন চারা লাগালেও ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব না। আমরা আরো মনে করি, এধরণের প্রত্যেক গাছ ঢাবি ক্যাম্পাসের একেকটা লিভিং মনুমেন্ট, আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। গাছ কাটার মাধ্যমে ক্যাম্পাসের সবুজ পরিবেশ ও ঐতিহ্য ধ্বংসের খেলায় নেমেছে প্রশাসন। তারা এটা করতে পারে না, ছাত্ররা বৃক্ষশূণ্য ক্যাম্পাস চায় না, সেই বার্তা আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দিতে চাই।"
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফারজানা মিম বলেন, আমরা নির্বিচারে এই গাছ হত্যার প্রতিবাদ জানাই। আমরা চাই এভাবে যেন আর কোনো গাছ হত্যাকাণ্ডের শিকার না হয়।"
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: