চলতি বছরের ১৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার প্রাথমিক চিন্তা করেছে সরকার। আগামী বুধবার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা খোলার সিদ্ধান্ত আসতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হার নিয়ে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত মানদণ্ড হচ্ছে, সংক্রমণ ৫ শতাংশে নেমে আসতে হবে। অথচ রোববার সংক্রমণের হার ছিল ১৪.১৪। এমন অবস্থায় খোলার উপায় নিয়ে চলছে নানান আলোচনা।
আর এবিষয় নিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, করোনা সংক্রমণের হার সব সময় নিম্নগামী থাকবে না। এটা ওঠানামার মধ্য দিয়েই হয়তো চলবে। সুতরাং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আর ছুটি অব্যাহত না রাখাই উত্তম বলে মনে হচ্ছে। কেবল যে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরতে চাচ্ছে তা নয়, শিক্ষকরাও সরাসরি পাঠদান ও গবেষণাগারে যাওয়ার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে আছেন। আমরা আর পেছনে ফিরতে চাই না। বিদ্যমান পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে এবং ক্যাম্পাসের চিরাচরিত জীবনধারা (লাইফস্টাইল) পরিবর্তন করে শিক্ষার্থীরা নতুন জীবন শুরু করবে বলেই প্রত্যাশা করি। করোনার বিষয়টি আর মাথাব্যথার কারণ হবে না বলেই মনে করি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে চাই।
অধ্যাপক আহমেদ বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ব্যাপারে ২৬ আগস্ট বৈঠক হয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর আরেকটি বৈঠক হবে। বিগত বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়ার ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ ব্যাপারে সরকারি তরফেও প্রয়োজনীয় উদ্যোগের কথা জানানো হয়েছে। সে অনুযায়ী, সর্বনিম্ন ১৮ বছর বয়সি শিক্ষার্থীদের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে টিকা দেওয়া হবে। যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তাদের দেওয়ার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কথা বলবে। আর যাদের দেওয়া যাবে না, তাদের এক ধরনের নম্বর দেওয়া হবে, সেটার অধীনে টিকা দেওয়া যাবে।
তিনি বলেন, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ব্যাপারেও একই নীতি অনুসরণ করা হবে। সুতরাং, টিকার বাইরে কেউই থাকবে না। যদিও বর্তমানে টিকার একটা সংকট চলছে। তবে টিকা আসছে। তখন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জনবল পাবেন বলে শিক্ষামন্ত্রী আমাদের জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, অক্টোবরে ক্যাম্পাস খোলার লক্ষ্যে একাডেমিক, প্রশাসনিকসহ বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আমরা ডিনদের সঙ্গে বসব। তারা চেয়ারম্যানদের নিয়ে বসবেন। সব মিলে সব শিক্ষকের সঙ্গেই এ নিয়ে বৈঠক হবে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ করবেন। আমাদের লক্ষ্য থাকবে স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ অনুসরণ করা।
শাবিপ্রবির দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে ভিসি বলেন, আমরা (শাবিপ্রবি) প্রচুর মাস্ক কিনেছি। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন স্থানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনিটাইজেশন পয়েন্ট থাকবে। সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকবে। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার, চুনকাম করা হয়েছে। ওয়াশব্লক আরও স্বাস্থ্যকররূপে সাজানো হয়েছে। মেডিকেল সেন্টার আরও আধুনিক করা হয়েছে। সেখানে আইসোলেশন কক্ষ করা হয়েছে। চিকিৎসকরা রোটেশনে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্বে থাকবেন। এরপরও উন্নত চিকিৎসার লক্ষ্যে আমরা একটি হাসপাতালের সঙ্গেও চুক্তি করেছি।
তিনি বলেন, শাবিপ্রবির মোট শিক্ষার্থীর ২০ শতাংশ আবাসিক হলে থাকে। ৮০ শতাংশের বাসে যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে হয়। বাসে যাতে ভিড় না জমে সে লক্ষ্যে অর্ধেক করে পরিবহণ করা হবে। এজন্য প্রয়োজনে ট্রিপ বাড়ানো হবে। বাসেরও ব্যবস্থা থাকবে। তাছাড়া সবার লেখাপড়া এখন সরাসরি শুরু হবে না। হলে উঠানোর ক্ষেত্রে ব্যাচভিত্তিক সিনিয়রিটি অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
অধ্যাপক ফরিদউদ্দীন বলেন, পরিস্থিতি বুঝে পর্যায়ক্রমে বাকিদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, শতভাগ পাঠদান এখন সরাসরি শুরু করা হবে না। ‘ব্লেন্ডেড’ (মিশ্র) শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হবে। কিছু ক্লাস সরাসরি আর কিছু অনলাইনে নেওয়া হবে। ফলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে। পরীক্ষাও ব্লেন্ডেড ব্যবস্থায় হবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: