শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে ১৫ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে নিরব প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ খান।
এ সময় অধ্যাপক ফরিদ খানের হাতে ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিন, শিক্ষাকে বাঁচান’; ‘শিক্ষার্থীদের বাঁচান’ লেখা সম্বলিত একটি প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। অধ্যাপকের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল মোমিন সংহতি জানান।
মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) সকাল ১০টায় পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্জোহা চত্বর থেকে হাঁটা শুরু করেন অধ্যাপক ফরিদ খান। যাত্রাপথে রাজশাহী কলেজ, নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে পুনরায় জ্জোহা চত্বরে এসে ১টা ৪৫ মিনিটে এ কর্মসূচি শেষ করেন তারা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবির পেছনে সাতটি যুক্তির কথা উপস্থাপন করেছেন অধ্যাপক ড. ফরিদ খান।
এক. শিক্ষার্থীরা শুধু লেখাপড়ায় পিছিয়ে যাচ্ছে তা নয়; আর্থিক, শারীরিক এবং মানসিকভাবেও তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেকে বিষণ্নতায় ভুগছে, হতাশায় ডুবছে। এ বিষাদগ্রস্ততা অনেককে নেশার জগতে ঠেলে দিচ্ছে, কেউ কেউ আত্মহত্যার পথ পর্যন্ত বেছে নিচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুললে এ সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে।
দুই. করোনাকালে সরকার অর্থনীতিকে যতটা গুরুত্ব দিয়েছে, শিক্ষাকে ততটা গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু মনে রাখা দরকার আজকের শিক্ষা আগামীকালের অর্থনীতি। একটি প্রজন্ম শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হলে ভবিষ্যতে মূল্য দিতে হবে।
তিন. আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়ে তাগিদ দিচ্ছে। ইউনিসেফ গত জুলাই মাসে এক বিবৃতিতে বলেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর বন্ধ রাখা উচিত হবে না। শিক্ষাঙ্গন বন্ধ থাকায় লাখ লাখ শিক্ষার্থীর লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে।
চার. জনসংখ্যার হিসাবে প্রতি ১০ লাখ জনসংখ্যায় কোভিড-১৯ শনাক্তে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৪তম আর মৃত্যুতে ১৩৭তম। ২২২টি দেশের মধ্যে জনসংখ্যার অনুপাতে করোনাভাইরাসের শনাক্তের হার এবং মৃত্যুর বিবেচনায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ অনেক ভালো অবস্থানে আছে। এর চেয়ে অনেক বেশি মাত্রার সংক্রমণের হার নিয়েও শিক্ষার গুরুত্ব বিবেচনা করে অন্যান্য দেশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়েছে।
পাঁচ. যারা ভাবছেন কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গেলেই করোনা ছড়াবে ব্যাপারটি ঠিক তা নয়। গত ১৭ আগস্ট ইকোনমিস্ট পত্রিকা লিখেছে, ইতালিতে একটি গবেষণায় দেখা যায়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় স্কুলের শিক্ষার্থীদের করোনা আক্রান্তের সম্ভাবনা সাধারণ জনগণের চেয়ে অনেক কম ছিল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধিতে কোনো প্রভাবক হিসেবে কাজ করেনি।
ছয়. টিকা নেওয়ার পরও অসংখ্য মানুষের করোনা হচ্ছে। টিকা নিলেও শিক্ষার্থীরা ভাইরাসের বাহক হিসেবে কাজ করতে পারে। সুতরাং মৃত্যু ঝুঁকি কমলেও তাদের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ আর হবে না বলা মুশকিল।
সাত. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা হয়তো আছে। তবে বর্তমানের এ অস্পষ্ট এবং অনিশ্চিত সুবিধা গ্রহণের আশায় ভবিষ্যৎকে বড় ক্ষতির মুখে ঠেলে দেয়া বুমেরাং হতে পারে। যে মানুষটি করোনার কারণে কাজ হারালেন তিনি হয়তো করোনা শেষে আবার কাজে ফিরতে পাবেন। কিন্তু যে শিশুটি স্কুল থেকে ঝরে গেলো তার আর কোনো দিন ফেরা হবে না।
এর আগে করোনায় চলমান শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করে অবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে সশরীরে গাছতলায় প্রতীকী ক্লাসের মাধ্যমে আন্দোলন করে যাচ্ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ ক'জন শিক্ষক।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: