করোনা মহামারীতে প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এত দীর্ঘ সময়েও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসের গাছতলায় সশরীরে প্রতীকী ক্লাস নিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন।
সোমবার বেলা ১১টায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের সামনে লিপু চত্বরে ক্লাস নেন এই শিক্ষক। তার এমন উদ্যোগে সংহতি জানিয়েছেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক বখতিয়ার আহমেদ এবং ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম। এছাড়াও সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ১৪ থেকে ১৫ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সরকারের যে ভাবনা, তা যৌক্তিক না মনে করি না, তাই এই প্রতীকী ক্লাস।’
জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের দক্ষিণ পাশে বিভাগের সামনে সোমবার সকালে একটি টেবিল, ডায়াস ও কয়েকটি বেঞ্চ নিয়ে ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে ‘মিডিয়া ও ক্ষমতা’ বিষয়ে ক্লাস নেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন।
ক্লাসের শুরুতে আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রতি সোম ও মঙ্গলবার এখানে প্রতীকী ক্লাসের আয়োজন করা হবে। এখানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমাদের ভাবনাচিন্তা বিনিময় করা হবে। এখানে মূলত সাধারণ কিছু বিষয়ে কথা বলা হবে, যেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ বা অন্য যেকোনো শিক্ষার্থী যোগ দিতে পারেন।
এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে প্রায় ১৭ মাস। সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার একাধিক তারিখ দিয়েও পরে তা বাতিল করা হয়। সর্বশেষ ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে প্রতি সোম ও মঙ্গলবার গাছতলায় ক্লাস নেয়ার কথা জানান রাবির এ শিক্ষক।
এ ব্যাপারে আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থা এভাবে চলতে পারে না। করোনাকালে শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সরকারের ভাবা উচিত, অন্যদের সঙ্গে কথা বলা উচিত। কিন্তু তারা সেটা ভাবছেও না। তারা কেবল নিজেরা এক জায়গায় বসে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এটা থেকে সরে এসে ভাবা দরকার যে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা কী ভাবছে।
দীর্ঘ সময় শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার বিষয়ে প্রশ্ন রেখে এ শিক্ষক আরও বলেন, টিকা দেয়ার পর নাকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে বলে জানাচ্ছে সরকার। কিন্তু টিকা তো সবাইকে দিতে পারছে না। আর স্কুলের শিক্ষার্থীদের তো টিকা দিচ্ছে না। এছাড়াও সারা বাংলাদেশে সবকিছু খোলা আছে। তাহলে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান কেন খুলে দেয়া হচ্ছে না? তাই আমরা প্রতীকীভাবে এটা চালিয়ে যাব।
এদিকে প্রতীকী ক্লাস শুরুর আগে আবদুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে প্রক্টর মো. লিয়াকত আলী ও দুজন সহকারী প্রক্টর দেখা করেন। সেখানে মতিহার থানা-পুলিশের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে প্রক্টর আবদুল্লাহ আল মামুনকে কর্মসূচি স্থগিত রাখার অনুরোধ করেন।
প্রক্টর লিয়াকত আলী বলেন, ‘আমরা সহযোগী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে কেবল সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছি। তিনি বলেছেন যে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলবেন। তখন আমরা চলে এসেছি।’
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: