জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বেড়েই চলেছে বজ্রপাত। এতে নিয়মিতই ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগের ঝুঁকি কমাতে বজ্রপাতের তিন ঘন্টা আগেই পূর্বাভাস দিতে পারবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগ।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের পর্যালোচনা করে জানা যায়, প্রতিবছর প্রাকৃতিক এই দুর্যোগের কারণে দেশে গড়ে প্রায় দুই শতাধিক মানুষ মারা যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষায় এই উদ্ভাবনী কাজ করেন বিশ্ববিদ্যালয়টি। দুইবছর ধরে গবেষণা করে এ সক্ষমতা অর্জন করে বিভাগটি। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাথে নিজেদের এই গবেষণা উপস্থাপন করে অনুমোদন পেলেই পরীক্ষা চালাবেন তারা।
বজ্রপাতের অধিকাংশ মৃত্যু হয় গ্রামীণ জনপদের মানুষদের। বজ্রপাতের সময় ঘরের বাইরে থাকা এবং অসচেতনতার ফলে হতাহতের ঘটনা দিনদিন বেড়েই চলেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক মো. জুয়েল মিয়া ২০১৯ সালে করা এক গবেষণায় দেখিয়েছেন যে দেশে ৫৮ শতাংশ বজ্রপাত হয় বর্ষাকালে। এই বজ্রপাতের ফলে ৮০ ভাগ হতাহতের ঘটনা ঘটে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত। রাতে ও ভোর রাতে বজ্রপাতে মৃত্যুর শতকরা অনেকটাই কম। এক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রে না থাকার কারণে মৃত্যু হার কম। তাছাড়া বজ্রপাতে যারা নিহত হয় তাদের ৯৫ ভাগই ঘটে ঘরের বাইরে অবস্থান করা মানুষদের মধ্য থেকে। মৃত্যু হওয়া মানুষদের ৬৫ ভাগই কৃষি কাজের সাথে যুক্ত।
মো. জুয়েল মিয়া বলেন, বজ্রপাতের ঝুঁকি কমাতে হলে আমাদের সামাজিকভাবে যে জনগোষ্ঠী আক্রান্ত অর্থাৎ কৃষক, দিনমজুর তাদেরকে তাদের ভাষায় বুঝাতে হবে। তাদের সচেতন করা গেলে এই দুর্যোগে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কমে আসবে৷ গ্রামীণ জনপদ সচেতনতা বৃদ্ধি করা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে সচেতনতামূলক সংবাদ, স্থানীয় দায়িত্বশীল পর্যায়ের লোকদের সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি এবং কেন্দ্রীয় সমন্বয় করে মানুষদের সচেতন করতে পারে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বজ্রপাত হওয়ার প্রায় ৩০ মিনিট আগে সংকেত দিতে পারলেও আমাদের দেশে সে ব্যবস্থা করা হয়ে উঠেনি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের দাবি বজ্রপাত ঘটার তিন ঘন্টা আগেই পূর্বাভাস দিতে সক্ষম তারা। এখন সেটি নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাথে কাজ করে চূড়ান্ত পর্যায়ের অপেক্ষা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশিদ বলেন, গবেষণা করে আমরা দেখেছি প্রায় তিন ঘন্টা আগে আমরা বজ্রপাতের পূর্বাভাস দিতে পারি। কিন্তু আমরা চাইলেই পূর্বাভাস প্রদান করতে পারি না কেননা জাতীয়ভাবে পূর্বাভাস প্রদানে একমাত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ হচ্ছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। আমরা অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করেছি। তাদের সাথে কাজ শেষে আমরা এটাকে ট্রায়ালে নিবো। আশাকরি আমরা সফল হবো৷
বজ্রপাতের ঝুঁকি কমাতে পূর্বাভাসের পাশাপাশি গ্রামীণ জনপদে ব্যাপক সচেতনতাই হতে পারে সবচেয়ে বড় সমাধান। যেই এলাকায় বেশি বজ্রপাত হয় সেখানে পূর্বাভাস অনুযায়ী বলে দিতে হবে যে এই সময় ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না৷ আর ঘরে থাকার সময়ও থাকতে হবে সচেতন। ঘূণিঝড় বা বন্যার মতো বজ্রপাতকেও অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়ে আগাম প্রস্তুতি নিশ্চিত করার কথার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: