করোনাভাইরাসের কারণে স্থগিত হওয়া পরীক্ষা অনলাইনের বদলে অতিদ্রুত সশরীরে গ্রহণের দাবিতে প্রতিবাদস্বরূপ প্রতীকী পরীক্ষা দিয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীরা
আবাসিক হল-ক্যাম্পাস খোলার দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া চত্ত্বরে শিক্ষার্থীরা প্রতীকী পরীক্ষা দেন। এতে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করে তাদের পরীক্ষা গ্রহণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহামুদুল হক এবং লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক আসাদ মন্ডল।
এসময় শিক্ষার্থীরা জানান, করোনার কারণে চলমান পরীক্ষাগুলো হুট করে স্থগিত হওয়ায় তারা নতুন করে আরও দেড় বছরের মতো ভয়াবহ সেশনজটের কবলে পড়ে গেছে। তাদের দাবি অনতিবিলম্বে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ বাতিল করে পুনরায় রুটিন প্রকাশ করে করোনার কারণে স্থগিত হওয়া পরীক্ষাগুলো সশরীরে গ্রহণ করা।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১১ মে অনুষ্ঠিত ৩০ তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। সুপারিশক্রমে ৭৮তম সিন্ডিকেট সভায় তা অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর বুধবার (০২ জুন) রাতে রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এমন সিদ্ধান্তের পর থেকেই শিক্ষার্থীরা সশরীরের পরীক্ষা গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছেন।
এবিষয়ে প্রতীকী পরীক্ষা গ্রহণকারী গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহামুদুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার মতো কোন পাবলিক পরীক্ষা নয়। এক সেমিস্টারে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা হয় ৫০-৬০ জন পরীক্ষার্থীর। একসাথে সকল ব্যাচের পরীক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। এজন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরাসরি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব। গবেষণা করে ইউজিসি এতদিনে সিদ্ধান্ত দিলো অনলাইন বা সরাসরি পরীক্ষা নেওয়ার৷ আর এখন বেরোবি সিদ্ধান্ত দিলো অনলাইনে পরীক্ষার।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সফটওয়্যার আছে কি? শিক্ষার্থীদের অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়ার প্রযুক্তি (ডিভাইস, স্পীডি ইন্টারনেট, পরীক্ষা চলাকালীন বিদ্যুৎ) আছে কি? আমি অনলাইনে যখম ক্লাস নেই শিক্ষার্থীরা অনেক রকম সমস্যায় পড়ে। তবে সকল শিক্ষার্থীদের সকল প্রযুক্তিগত সুবিধা ও দক্ষতা নিশ্চিত করে অনলাইনে পরীক্ষার নেয়া হলে দুই পদ্ধতির দক্ষতা অর্জিত হয়। করোনা অতিমারিতে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার প্রযুক্তিগত প্রবেশযোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জনও জরুরি।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মুনতাসির আহমেদ বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর বাড়ি গ্রামে। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা গ্রামেই অবস্থান করছেন। গ্রামে ইন্টারনেটের গতি নেই বললেই চলে। তার মধ্যে অনেক শিক্ষার্থীর স্মার্টফোন নেই। এমন অবস্থায় অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শ্রেণিকক্ষেই যেন পরীক্ষা নেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট রাইটস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক বায়েজিদ আহমেদ বলেন, বেরোবিতে এমনিতেই সেশনজট তার ওপর করোনা মহামারিতে তা প্রকট আকার নিয়েছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের অনলাইনে নিলে অনেক জটিলতা দেখা দিবে। তাই আমরা চাই সশরীরে পরীক্ষা নেওয়া হোক।
এর আগে বিকেলে একই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন করে স্টুডেন্ট রাইটস ফোরাম, বেরোবি এবং কাঞ্চন নামের দুটি সংগঠন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: