উচ্চশিক্ষার জন্য ‘শিক্ষা ভিসায়’ যুক্তরাজ্যে যাওয়ার হিড়িক পড়েছে সিলেটে। যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা ভিড় করছেন আইইএলটিএস সেন্টারগুলোতে।
‘ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম-আইইএলটিএস’-এ স্কোর পাঁচের ওপর করতে পারলেই যেন যুক্তরাজ্যের স্টুডেন্টস ভিসার সোনার হরিণ হাতের মুঠোয় ধরা দিচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী যাওয়ার সময় নির্ভরশীল হিসেবে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন স্পাউস ও সন্তানদের। ভিসা প্রাপ্তি সহজ হওয়ায় গত চার বছরে সিলেট থেকে শিক্ষার্থী ও তাদের নির্ভরশীল হিসেবে প্রায় এক লাখ লোক যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে। যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশ ‘শিক্ষা ভিসা’ ও ইমিগ্রেশন শর্ত শিথিল করায় সেসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহ বেড়েছে সিলেটের শিক্ষার্থীদের।
বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে ‘শিক্ষা ভিসা’ প্রাপ্তির হার বেড়ে যাওয়ায় প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার হিড়িক পড়েছে। তিন ও চার বছরমেয়াদি স্নাতক এবং এক ও দুই বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তর শিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে ছুটছেন তারা। শিক্ষা ভিসার জন্য আইইএলটিএস করার জন্য ভিড় করছেন সেন্টারগুলোতে।
সিলেট ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ ট্রেনিং ইনস্টিটিউট অ্যাসোসিয়েশন (সেলটা)-এর সভাপতি অ্যাডভোকেট খালেদ চৌধুরী জানান, তাদের সংগঠনের অধীনে ৪০টির বেশি আইইএলটিএস সেন্টার রয়েছে। অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ ভিসা বেশি হচ্ছে। যে কারণে ইংরেজি শিক্ষার জন্য আইইএলটিএস সেন্টারগুলোতে শিক্ষার্থীদের ভিড় বেড়েছে। ব্রিটিশ কাউন্সিল প্রতি সপ্তাহে একটি করে পরীক্ষা নিচ্ছে। মাসে ২ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী আইএলটিএস পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার মো. কফিল হোসেইন চৌধুরী বলেন, ‘যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশের ভিসা সাকসেস রেট ভালো হওয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য বহির্গামী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে আইইএলটিএস পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও দু-তিন গুণ বেড়েছে।’
২০১৯ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে ‘শিক্ষা ভিসা’র দ্বার প্রসারিত হয়। ওই সময় থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেন প্রচুর সংখ্যক শিক্ষার্থী। এরপর করোনার কারণে কিছুটা স্থবিরতা দেখা দেয়। ২০২১ সালে শিক্ষা ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যে যান প্রচুর শিক্ষার্থী। শিক্ষা ভিসায় যুক্তরাজ্যে যাওয়ার এই ঢেউ এখনো সিলেটজুড়ে চলছে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের জন্য ‘শিক্ষা ভিসা’ নিয়ে ছুটছেন স্বপ্নের দেশ যুক্তরাজ্যে। এর মধ্যে বিবাহিত শিক্ষার্থীরা যাওয়ার সময় নির্ভরশীল হিসেবে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন ‘স্পাউস’ ও শিশুসন্তানদের। ২০১৯ থেকে গত চার বছরে সিলেট থেকে শিক্ষা ভিসা নিয়ে কী পরিমাণ শিক্ষার্থী বিদেশ গেছেন তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই।
তবে সিলেটে শিক্ষা ভিসা প্রসেসিং নিয়ে কর্মরতদের সংগঠন ‘ফরেন অ্যাডমিশন অ্যান্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট কনসালটেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র তথ্য মতে, ২০১৯ সাল থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা অধিক হারে যুক্তরাজ্যে যাওয়া শুরু হয়। করোনার সময় কিছুটা কমলেও ২০২১ সালে সিলেট থেকে শিক্ষা ভিসা পান ১০ হাজার ৯০ জন শিক্ষার্থী।
২০২২ সালের জানুয়ারি সেশনে প্রচুর সংখ্যক শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যে গেছেন। চলতি সেপ্টেম্বর সেমিস্টারেও সিলেট থেকে ৬-৭ হাজার শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন। সবমিলিয়ে গত চার বছরে শিক্ষার্থী ও নির্ভরশীল মিলে সিলেট থেকে প্রায় এক লাখ মানুষ যুক্তরাজ্য গেছেন- বলছে সংগঠনটির তথ্য।
সংগঠনের সিলেটের সভাপতি মো. ফেরদৌস আলম জানান, যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখার জন্য শিক্ষা ভিসা অনেক সহজ করা হয়েছে। যে কারণে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন। যুক্তরাজ্য ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশেও শিক্ষা ভিসায় যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। যারা শিক্ষা ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন তারা শিক্ষাকোর্স সম্পন্নের অনুরোধ জানান ফেরদৌস আলম।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: