ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, জাতি রাষ্ট্র, জাতি বিনির্মাণ, জাতির উন্নয়নে সিংহভাগই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ গণতান্ত্রিক বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা রয়েছে। এই জাতির যা কিছু মহৎ অর্জন সব কিছুর অবদানের সিংহভাগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সে ধারাটাই আমাদের অব্যাহত আছে। এটাকে আরও বেগবান করতে আমরা কাজ করছি।
জাতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রতিষ্ঠার ১০২ বছরে পদার্পণ করেছে আজ। বিশেষ এই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, গবেষণা, ডাকসু নির্বাচন, চ্যালেঞ্জ, ঘাটতিসহ নানা বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
তিনি বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। আমাদের লক্ষ্য বৃথা যায়নি। তবে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অতীত ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে পারলেই আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যাব।
গবেষণার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবনার বিষয়ে অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আমাদের মূল কাজ হলো গবেষণাকে ইন্ডাস্ট্রিমুখী করা, ইন্ডাস্ট্রির সাথে সমন্বয় ঘটানো। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার ফল যখন ইন্ডাস্ট্রিতে পড়বে তখন ইন্ডাস্ট্রি সে নিরিখেই উন্নয়ন ঘটাবে এবং সেটির ফল জাতীয় উন্নয়নে ঘটবে। এভাবে একটির সাথে আরেকটি গভীরভাবে জড়িত। আমরা সে উদ্যোগ নিচ্ছি। আমাদের এবারের প্রতিপাদ্য– গবেষণা ও উদ্ভাবন: ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সহযোগিতা। শিরোনামই বলে দিচ্ছে আমাদের চিন্তা-ভাবনা কোন দিকে যাচ্ছে। সে কারণে আমরা অক্টোবরে একটা গবেষণা-প্রকাশনা মেলা করব। আর সেরা শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রীয়ভাবে আমরা সংবর্ধনা দেব। এগুলো শিক্ষার্থীদের গড়ে উঠতে অনুপ্রেরণা দেবে।
ডাকসু নির্বাচন হলেও তার ধারাবাহিকতা রক্ষা না হওয়ার পেছনে কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়নে এবং নেতৃত্ব বিকাশে এই বিষয়টিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে আমরা মনে করি। সেই ধারণা থেকেই আমরা দীর্ঘ ২৮ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিয়েছিলাম। জাতীয়ভাবে অনেক ধরনের উপাদান ডাকসু নির্বাচনের সাথে জড়িত। ফলে সুন্দর একটি পরিবেশ এবং সকলের সহযোগিতা পেলেই এমন একটি বড় কর্মযজ্ঞ করা সম্ভব হবে। আমরা আশা করব যে ওই ধরনের একটি পরিবেশ, যেখানে গণতন্ত্র চর্চা হবে, যেখানে তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার হবে না এই ধরনের অনেক মূল্যবোধগুলোর বিকাশ হবে। গুজব, তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার, কখনো কখনো অনাকাঙ্ক্ষিত অমানবিক আচরণ এই বিষয়গুলো অনেক সময় এই ধরনের মহৎ উদ্যোগ গ্রহণে বাধাগ্রস্ত করে। সে বিষয়গুলোর ক্রমশ উন্নয়ন ঘটিয়ে ডাকসু নির্বাচনের দিকে যেতে হবে।
মাস্টারপ্ল্যানে প্রাথমিকভাবে কোন কোন বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, মাস্টারপ্ল্যানের প্রথম পর্যায়ের যে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ, তার জন্য প্রায় ২ হাজার ৭শ ৫ কোটি টাকার কতগুলো প্রকল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আমাদের ল্যাব আছে, লাইব্রেরি আছে, শ্রেণিকক্ষ আছে, শিক্ষার্থীদের আবাসিক ভবন, টিএসসি তো আছেই। স্বতন্ত্রভাবে এগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা সরকারের কাছে প্রকল্প জমা দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে এসব মুখ্য জায়গা বলে আমরা মনে করি।
শতবর্ষী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এখনও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে কি না এমন প্রসঙ্গে ভিসি বলেন, সবসময় ব্যর্থতার দিক থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। আমাদের অনেকগুলো ঘাটতি রয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসে সুন্দর একটি পরিবেশ, পড়ার জন্য চেয়ার-টেবিল দিতে পারি না, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য একটি সিঙ্গেল বেড দিতে পারি না, লাইব্রেরিতে বসার সুযোগ করে দিতে পারি না। ঘাটতি তো আমার অনেক। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অনেক নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা যায়, তাদের পরিবেশ দেখলে নিজেদের কাছে তাৎক্ষণিকভাবে একটা ধাক্কা লাগে যে, আমাদের ছেলে-মেয়েদের জন্য আমরা এটা করতে পারিনি। ফলে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ সীমাবদ্ধতা আমাদের আছে তারপরও আনন্দের যেটা, সেটা হলো ছেলে-মেয়েদের মাঝে ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে। আমি খুব আনন্দের সাথে লক্ষ্য করেছি জ্ঞানগর্ব আলোচনা যেখানে হয় সেটাও মন দিয়ে তারা শোনে। জায়গা কম তাই তারা পালাবদল করে পড়াশোনা করছে, সুন্দর পরিবেশ পেলে তারা সেখানে বসে আড্ডা দেয়, গ্রুপ স্টাডি করে, ক্লাস-পরীক্ষার সাথে তারা কম্প্রোমাইজ করে না, এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় শক্তি এবং উন্নয়নের সূচক।
শিক্ষার্থীদের মৌলিক দুইটি অধিকার আবাসন এবং নিরাপদ খাদ্যের সমস্যার সমাধান কিভাবে দেখছেন এ বিষয়ে ভিসি বলেন, এই দুটিতে আমাদের ঘাটতি আছে। আবাসনের বিষয়টি আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক। এক্ষেত্রে আমরা বহু পিছিয়ে আছি। মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন হলে এই সমস্যা আর থাকবে না। নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে আমাদের সকলেরই ভূমিকা রাখা উচিত। যিনি খাদ্য গ্রহণ করবে এবং যারা খাদ্য সরবরাহ করবে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীরা যেহেতু সমাজের সবচেয়ে সচেতন অংশ, সুতরাং আমাদের বেশি সচেতন হতে হবে। আমাদের খাদ্যের মান আরও বাড়াতে হবে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে ভিসি তার পরিকল্পনার বিষয়ে বলেন, আমাদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। আমাদের ছোট ছোট কর্ম উদ্যোগ আছে। এইগুলো বিনম্র উদ্যোগ, আমাদের পূর্বপুরুষরাও দেখিয়েছেন। আমরা যেন কখনও পিছিয়ে না যায়।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: