পটুয়াখালীর গলাচিপার হরিদেবপুরের কৃষক আনিসুর রহমান বেশ কয়েকবছর ধরেই নিজের জমিতে তরমুজের চাষ করছেন। এবছর আধা একর জমিতে তরমুজের চাষ করে ফলন হয়েছে আশানুরূপ। তার এ জমিতে তরমুজ চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। তিনি বর্তমান বাজার অনুযায়ী প্রায় ৯০ হাজার টাকা লাভ করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
আনিসুর রহমান বলেন, আশা এক একর জমিতে প্রায় ৫ হাজার তরমুজ ফলে আর এক একরের ক্ষেতের তরমুজ বিক্রি হয় ৩.৫-৪ লাখ টাকায়। গড়ে প্রতিটি তরমুজ ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়। যেখানে ১৫ কেজির ওপরে প্রতিটি তরমুজ ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারি।
অন্যান্য বছরের মতো এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় তরমুজ ক্ষেতের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। তাই আনিসুর রহমানের মতো যারা এ বছর তরমুজের চাষ করেছে সবারই ফলন ভালো হয়েছে বলে জানান কৃষকরা।
তবে কৃষকরা বিগত বছরের দামে তরমুজ বিক্রি করলেও খুচরা বিক্রেতারা ২ থেকে ৩ গুণ দামে তা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছে।
কারওয়ান বাজার, বাদামতলী, বেরিবাঁধের তরমুজের পাইকারি বিক্রির আড়তগুলো ঘুরে দেখা যায়, ভোররাত থেকেই আড়তগুলোতে বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা থেকে তরমুজ ট্রলার কিংবা ট্রাকে করে আসতে থাকে। ভোর থেকেই চলে বিকিকিনি। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায় অন্য বছরের তুলনায় এ বছর তরমুজের ফলন এবং বাজার দুটোই ভালো। কৃষকরাও দাম পাচ্ছে তাদের চাহিদা অনুযায়ী এবং খুচরা বিক্রেতারা আড়ৎ থেকে নিয়মিতই তরমুজ কিনে নিচ্ছেন।
তবে পাইকারি বাজারের সাথে খুচরা বাজারের দামের বেশ পার্থক্য লক্ষ্য করা গিয়েছে। খুচরা বিক্রেতারা আড়তগুলো থেকে পিস হিসেবে তরমুজ কিনলেও তা বাজারে উচ্চ দামে কেজি হিসেবে বিক্রি করছে। তারা প্রতি কেজি ১২-১৫ টাকা দরে কিনে খুচরা বাজারে ক্রেতাদের কাছে প্রতি কেজি ৩৫-৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
এদিকে বড় সাইজের তরমুজগুলো বিভিন্ন বিপনিবিতানগুলোতে কেটে ছোট ছোট খন্ড করেও বিক্রি করা হয়।
খুচরা বিক্রেতারা তাদের ক্রয় হিসেবে প্রতি কেজি তরমুজ ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে কিনলেও সেগুলো বাজারে ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি করছে। আবার কোথাও কোথাও ৫০ টাকা দরেও বিক্রি করছে।
কারওয়ান বাজার আদর্শ ফল ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুবুল আলম বাবুল জানান, যখন তরমুজের প্রথম সিজন থাকে তখন কেজি দরে বিক্রি হয়। তবে এখন পাইকারি ক্রয় বিক্রয় পিস হিসেবেই হয়। কারওয়ান বাজারে ৪০ টির মতো আড়ত রয়েছে। প্রতিদিন এ আড়তগুলো থেকে লক্ষাধিক পিস তরমুজ বিক্রি হয়।
এ বছর তরমুজের বাজার ভালো উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর তরমুজ বেশি বিক্রি হচ্ছে। দামও পাওয়া যাচ্ছে মোটামুটি। তরমুজের সিজন থাকে মার্চ মাসের শুরু থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত।
তবে আড়তদার হিসেবে তরমুজ বিক্রির টাকার উপর ৬% হারে টাকাটাই তারা সংগ্রহ করেন।
ঢাকা মহানগর ফল আমদানি ও রপ্তানিকারক এবং আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড এর সভাপতি সিরাজুল ইসলাম জানান, পুরান ঢাকার বাদামতলীর ওয়াইজঘাটে প্রায় ৬০ টি আড়ৎ আছে। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর তরমুজের উৎপাদন ও বিক্রি ভালো। তরমুজের ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগী বলতে খুচরা বিক্রেতারাই বেশি লাভ করছে। তবে এবার কৃষক ভালো দাম পাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, সর্বশেষ ২০২০ সালে সারাদেশে ৩৮,৮২৪ হেক্টর জমিতে ১,৪৫২,৫৯২ মে. টন তরমুজ উৎপাদন হয়েছে। এ বছর উৎপাদন ১৫ লাখ মে. টনেরও বেশি তরমুজ উৎপাদন হবে বলে তারা ধারণা করছেন।
এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সারাদেশে ৩৪,৬০৭ হেক্টর জমিতে ১,৩৬৭,৩৫৬ মে. টন তরমুজ উৎপাদন হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার উইং এর সহকারী উদ্যানতত্ত্ববিদ সাবিনা ইয়াসমিন জানান, গত বছর তরমুজের ফলন ভালো ছিল এবং এ বছরও তার থেকে বেশি উৎপাদন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জুলাই মাসে আমরা নতুন বছরের হালনাগাদ তথ্য দিতে পারবো। সিজন শেষ না হলে কতটুকু জমিতে চাষ হলো এবং কি পরিমাণ উৎপাদন হবে সেটা বলা কষ্টকর।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: