ভারতে শতাধিক কিডনি বিক্রি করেছে সংঘবদ্ধ চক্র

সময় ট্রিবিউন | ১৩ অক্টোবর ২০২১, ০০:০১

ছবিঃ সংগৃহীত

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র অবৈধভাবে কিডনি কেনা-বেচা করত। কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য একজন রোগীর কাছ থেকে চক্রটি ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা নিত। বিপরীতে কিডনি ডোনারকে মাত্র ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিত। এজন্য অগ্রিম ২ লাখ টাকাও প্রদান করতো। কিন্তু ট্রান্সপ্লান্টেশনের পর কিডনি ডোনারদের প্রতিশ্রুতির অর্থ না দিয়ে উল্টো নানান ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হতো। এভাবে শতাধিক মানুষের কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন করেছে চক্রের মূল হোতা শাহরিয়ার ইমরান আহম্মেদ। ভারতে অবস্থানরত কিডনি কেনাবেচা চক্রের সঙ্গে যোগসাজশে তিনি এসব অপকর্ম করে আসছিলেন।

চক্রটির অন্যতম মূলহোতা ও সংশ্লিষ্ট ফেসবুক পেইজের এডমিন মো. শাহরিয়ার ইমরানসহ ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে এলিট ফোর্স র‍্যাব। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জয়পুরহাট ও ঢাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে কিডনিসহ মানবদেহের নানাবিধ অঙ্গের অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে কয়েকটি চক্র। এসব চক্রের ফাঁদে পড়ে অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষ ক্ষেত্র বিশেষ গ্রাহকরাও প্রতারিত হচ্ছে। আইন বহির্ভূত, স্পর্শকাতর ও অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের এমন কার্যক্রমে চক্রের সদস্যরা অর্থের লোভে অমানবিক কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে। সম্প্রতি র‌্যাবের সাইবার মনিটরিং সেল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবৈধ কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গ ক্রয়-বিক্রয় সিন্ডিকেটের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে আসছিল।

এরই ধারাবাহিকতায় গত মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত র‌্যাব-৫, র‌্যাব-২ ও র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখার যৌথ অভিযানে জয়পুরহাট এবং রাজধানীর নর্দা থেকে কিডনি ক্রয়-বিক্রয় সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা শাহরিয়ার ইমরান আহম্মেদ (৩৬), সহযোগী মেহেদী হাসান (২৪), সাইফুল ইসলাম (২৮), আব্দুল মান্নান (৪৫) ও তাজুল ইসলাম ওরফে তাজুকে (৩৮) গ্রেফতার করা হয়।

অভিযানে ভুক্তভোগী কিডনি দাতাদের ৪টি পাসপোর্ট, মেডিকেল চিকিৎসার জন্য পাসপোর্ট, ভিসা সম্পর্কিত বেশকিছু কাগজপত্র, ৫টি মোবাইল এবং দেশি বিদেশি মুদ্রা জব্দ করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানান, তাদের চক্রের মোট সদস্য সংখ্যা ১৫-২০ জন। তারা ৩টি ভাগে বিভক্ত হয়ে কিডনি কেনাবেচা করে থাকে। চক্রের প্রথম গ্রুপ ঢাকায় অবস্থান করে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রয়োজন এমন বিত্তশালী রোগীদের সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ করে। আর চক্রের দ্বিতীয় দলটি চাহিদা অনুযায়ী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব ও অভাবী মানুষ চিহ্নিত করে এবং তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য ডোনার হতে প্রলুব্ধ করে ঢাকায় নিয়ে আসে।

মান্ডার মঈন আরও বলেন, গ্রেফতাররা এভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ অবৈধ উপায়ে হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতিটি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য তারা রোগীর কাছ থেকে ১৫-২০ লাখ টাকা গ্রহণ করে থাকতো। বিপরীতে তারা কিডনি ডোনারকে দুই লাখ টাকা প্রদান করতো। 

চক্রের মূলহোতা ইমরান প্রতিটি কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন বাবদ ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা এবং মান্নান ও তাজুল প্রতি কিডনি দাতা সংগ্রহ বাবদ যথাক্রমে ৫ লাখ এবং ৩ লাখ টাকা গ্রহণ করতো। আইনের হাত থেকে বাঁচার জন্য এই চক্রটি কোনো প্রকার রশিদ, পাসপোর্ট বা অন্যান্য প্রমাণ ডোনারকে দিত না। চুক্তি অনুযায়ী কিছু অর্থ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ভিকটিমদের দমিয়ে রাখা হতো।

গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাতে কমান্ডার মঈন বলেন, শাহরিয়ার ইমরান পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থানরত কিডনি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতায় একটি দালাল চক্র প্রতিষ্ঠা করে। অনলাইনের মাধ্যমে বিত্তশালী কিডনি রোগী এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে কিডনি ডোনার সংগ্রহসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করত।

ইমরান ফেসবুকে ‘বাংলাদেশ কিডনি ও লিভার পেশেন্ট চিকিৎসা সেবা’ এবং ‘কিডনি লিভার চিকিৎসা সেবা’ নামক ২টি পেজের এডমিন। এ পর্যন্ত তিনি কিডনি বিক্রয়ের জন্য প্রায় শতাধিক মানুষকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করেছেন।

গ্রেফতার চক্রের অন্যতম আসামি আব্দুল মান্নান মূলত কিডনি ডোনারদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে এই অনৈতিক কাজে প্রলুব্ধ করেন। ইতোপূর্বেও এই অপরাধের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তিনি গ্রেফতার হোন। তার বিরুদ্ধে মানব দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনে ৬টির বেশি মামলা রয়েছে।

গ্রেফতার তাজুল ইসলাম মান্নানের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। তার বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে।

গ্রেফতার অপর দুই আসামি সাইফুল ইসলাম এবং মেহেদী হাসান কিডনি ডোনারদের পার্শ্ববর্তী দেশে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পাসপোর্ট, মেডিকেল ভিসা এবং অন্যান্য কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে প্রস্তুত করতেন। এ কাজে তারা জনপ্রতি ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা করে নিতেন বলে স্বীকার করেছেন।

 

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


জনপ্রিয় খবর