গত ৩০ এপ্রিল আরাফা প্রধান মিথিলা নামের এক কিশোরীকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাড়িতে ধর্ষণের পর মারধর করে আটকে রেখে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান তাসভীরের বিরুদ্ধে।
পরবর্তীতে পুলিশের সহায়তায় মেয়েটি উদ্ধার হলেও প্রশ্ন ওঠে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। মূল বিষয়টি পাশ কাটিয়ে একটি নামমাত্র মামলা নিয়ে এতবড় স্পর্শকাতর ঘটনা ধামাচাপা দেয়া হয়।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ৩০ এপ্রিল সকাল ৮.০০ টা নাগাদ বসুন্ধরা গ্রুপের ৪-৫ জন সিকিউরিটি গার্ড জোরপূর্বক মিথিলার বাসায় প্রবেশ করে টেনেহিঁচড়ে তাকে একটি নার্সারিতে নিয়ে যায়। সেখানে তার উপর শারীরিক নির্যাতনের পর মাথার চুল ন্যাড়া করে দেওয়া হয় এবং সারা শরীর মারাত্মকভাবে জখম করা হয়। পরবর্তীতে মিথিলা তার বাবা-মাকে ফোনে ঘটনা জানাতে সক্ষম হলে পুলিশের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করা হয়।
তবে অতি সম্প্রতি সময় ট্রিবিউন অনুসন্ধান করে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে। কিশোরীটিকে ঐ দিনের অমানুষিক নির্যাতনের মূলহোতা ছিলেন নাবিল আহমেদ, যিনি তাসভীরের স্ত্রী ইয়াশার আপন বড় ভাই এবং মাগুরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মুস্তফা কামাল মহিউদ্দিনের ছেলে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে বলেন, নাবিল নিজে মিথিলার মাথা ন্যাড়া করেছে এবং তারই নির্দেশে বসুন্ধরা গ্রুপের সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের ফয়েজের নেতৃত্বে ৪/৫ জন মিথিলাকে বেদম পিটিয়েছে।
এতো বড় অপরাধ করেও নিজেদেরকে আইনী ঝামেলা থেকে মুক্ত রাখতে মিথিলা, তার বড় বোন ও মাকে হুমকি-ধামকি দিয়ে একটি মুচলেকাও রাখা হয়। তারপর একটি গাড়ি ভাড়া করে এনে মিথিলদেরকে জোরপূর্বক মানিকগঞ্জে পাঠিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছিল। নার্সারিতে এই ঘটনাগুলো ঘটার সময় বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ওরফে শাহ আলম সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে ভাটারা থানায় রুজু হওয়া মামলাটি তদন্ত করতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। নির্যাতিত কিশোরীকে খুঁজে না পাওয়া, বাদীর অসহযোগীতা এবং সর্বোপরি ভূক্তভোগীর পরিবারের মামলার প্রতি অনীহা এর অন্যতম কারণ। তবে এসবের পেছনে রয়েছে সাফওয়ান সোবহান তাসভীরের কূটচাল। গত দুই সপ্তাহ মিথিলা এবং তার পরিবারের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে অধিকতর অনুসন্ধান চালিয়ে সময় ট্রিবিউনের হাতে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য। জানা যায়, ইয়াশাকে ডিভোর্স দিয়ে শীগ্রই মিথিলাকে বিয়ে করবেন বলে তাসভীর আশ্বাস দিয়েছেন মিথিলাকে। এবং এই আশ্বাসকে পাকাপোক্ত করতে মিথিলা ও তার পরিবারকে তাসবীর একটি ফ্ল্যাট ও একটি বিলাসবহুল গাড়ি উপহার দিয়েছেন। বর্তমানে মিথিলা তাসবীরের স্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। ফ্ল্যাট ও গাড়ির বিষয়ে মূল্যবান তথ্য-প্রমাণাদি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সময় ট্রিবিউন সেগুলো সঠিক যাচাই-বাচাই পূর্বক বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করবে।
অপরদিকে, রুজুকৃত মামলার তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে সোচ্চার হয়েছে বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন। এরকম বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্পর্শকাতর এই মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত আসামীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় না আনলে মানববন্ধন ও অন্যান্য কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পুলিশের উপর চাপ প্রয়োগ করা হবে। তারা আরও জানান, ইতোমধ্যে মামলার তদন্ত অগ্রগতি, মূল আসামিদের বাদ দেয়ার কারণসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে চেয়ে ভাটারা থানা পুলিশকে অফিসিয়ালি চিঠি দিয়েছেন তারা। এরপরও তদন্তে দৃশ্যমান অগ্রগতি না দেখলে মূলহোতাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি সহ সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
উল্লেখ্য, মিথিলাকে নির্যাতন, প্রথমে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে নার্সারিতেই মুচলেকা নিয়ে ঘটনা ধামচাপা দেওয়ার চেষ্টা, পরে মামলা ভিন্নখাতে নেয়া, মূলহোতাদের বাদ দেওয়া এবং ভূক্তভোগীকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মেনেজ করা সংক্রান্ত যথেষ্ট পরিমাণ অকাট্য তথ্য- প্রমাণ (ভয়েস রেকর্ড সহ) সময় ট্রিবিউনের হাতে রয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: