২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের ওপর হামলার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। সোমবার (২৯ নভেম্বর) সুধারম হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম বাদী হয়ে সুধারাম মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ৮ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাত আরও ৩৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তার নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
এর আগে দুপুরে দুপুরে চিকিৎসক নেতাদের সাথে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের জরুরী সভায় দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাসের প্রেক্ষিতে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়। এতে প্রায় ২৪ ঘন্টা পর দুপুর দুইটা থেকে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়। বৈঠকে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক শিহাব উদ্দিন শাহিন, নোয়াখালী পৌর সভার মেয়র সহিদ উল্লা খানসহ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়, আবাসিক মেডিকেল অফিসার, বিএমএ এবং স্বাচিপ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ডাক্তার ও নার্সরা সমঝোতার ভিত্তিতে দোসীদের শাস্তি নিশ্চিত ও এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন উক্ত ঘটনার জন্য অনুতপ্ত হওয়ায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেন তারা।
জেলা স্বাচিপের সভাপতি ডাক্তার ফজলে এলাহী জানান, ডিসি, এসপি ও জেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক খায়রুল আলম সেলিম ও যুগ্মআহবায়ক শহিদ উল্যাহ খান সোহেলের উপস্থিতিতে এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন এ ঘটনার জন্য অনুতপ্ত হন এবং সকলের সাথে মিলে মিশে কাজ করবেন। এছাড়া ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তির আশ্বাসে কর্মসূচী প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু মামলায় আসামিদের গ্রেফতার করতে হবে।
এর আগে সোমবার সকাল ১০ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়কের উপস্থিতিতে তত্বাবধায়ককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে মানববন্ধন, সমাবেশ, সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও তার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে। দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ), স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) নোয়াখালী জেলা শাখা এ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে বাৎসরিক ক্রয় সংক্রান্ত দরপত্র সিডিউল ক্রয়কে কেন্দ্র করে এ ঘটনায় রবিবার দুপুর থেকে শুরু হওয়া হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরের ডাকা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি এখনো চলছে। মানববন্ধন, সমাবেশ ও বিক্ষোভ থেকে আজও (সোমবার) দোষিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি তোলা হয়। গ্রেপ্তার ও বিচার না হওয়া পর্যন্ত হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও কিডনি ডায়ালসিস, স্ক্যানোসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে জরুরী রোগিদের চিকিৎসা ছাড়া অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি চলবে বলে ঘোষণা দেন বিএমএ ও স্বাচিপের নেতৃবৃন্দ।
সকালে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের সামনের সড়কে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে বিএমএ ও স্বাচিপের চিকিৎসকরা। এসময় হাসপাতালের চিকিৎসক, ইন্টার্ণি চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারি, নোয়াখালী আবদুল মালেক মেডিকেল কলেজের শিক্ষক- শিক্ষার্থী, নোয়াখালী প্যারামেডিকেল কলেজ-এনপিসি ম্যাট্স শিক্ষার্থীরা কর্মসূতিতে যোগ দেয়। মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সুধারাম মডেল থানার সামনে প্রধান সড়কে অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। এসময় জেলা শহর মাইজদীর প্রধান সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক শিহাব উদ্দিন শাহিনের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়। ফলে প্রধান সড়কে সকল ধরণের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রায় ২৫ মিনিট সড়ক অবরোধ শেষে বিক্ষোভ মিছিলটি নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের দিকে ফিরে যায়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বিএমএর সভাপতি ডা. এম এ নোমান, স্বাচিপের সভাপতি ডা. ফজলে এলাহী খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম, আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. সৈয়দ কামরুল হোসেন, শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ডা. আবু নাছের নার্সেস এসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল্যাহ ফারুক, ইন্টার্ণি চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মিলন দাস প্রমূখ।
প্রসঙ্গত: নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে বাৎসরিক ক্রয় সংক্রান্ত দরপত্র সিডিউল ক্রয়কে কেন্দ্র করে রোববার দুপুর ২টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়কের উপস্থিতিতে তত্বাবধায়ককে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে তাৎক্ষণিক কর্মবিরতি ঘোষণা দেয় হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসক, ইন্টার্ণি চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারিরা।
উল্লেখ্য,গতকাল রোববার দুপুর ২টার দিকে নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে বাৎসরিক ক্রয় সংক্রান্ত দরপত্র সিডিউল ক্রয়কে কেন্দ্র করে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়কের উপস্থিতিতে তার অনুসারীরা২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মো.হেলাল উদ্দিনকে তার অফিস কক্ষে মারধর করে। তবে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন গণমাধ্যম কর্মিদের কাছে দাবি করেন, এ ঘটনায় তার কোন অনুসারী জড়িত নয়।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: