ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সব কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দিতে পারেননি। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট নিয়োগ দিতে না পারার বিষয়টি এলাকায় বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ইউপি নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে বৃহস্পতিবার উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ভোট হয়। রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ ইউনিয়নের সহ-সভাপতি ডা.হামিদুর রহমান আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী। আর সেখানে বিদ্রোহী হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন নেকমরদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন মাস্টার।
সরেজমিননে কেন্দ্রগুলোয় সকাল থেকেই ভোটারদের ভালো উপস্থিতি দেখা গেছে। ওই ইউনিয়নের আটটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, মাত্র দুটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট আছে। বাকি সাতটিতে নৌকা প্রার্থীর কোনো এজেন্ট দেখা যায়নি। আবার যে দুটি কেন্দ্রে এজেন্ট পাওয়া গেছে, সেখানে আবার সব কক্ষে এজেন্ট পাওয়া যায়নি।
আলিমুদ্দিন সরকারি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের ঘোড়া মার্কার পোলিং এজেন্ট আবদুর রহিম বলেন, সকাল থেকে তাঁরা নৌকার কোনো পোলিং এজেন্টের দেখা পাননি। সেই সময় নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক যুবক বলেন, ‘এটা মজার ব্যাপার। সারা দেশে ক্ষমতাসীনরা বিরোধী প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার কথা শুনি। আর এখানে খোদ ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরই পোলিং এজেন্ট নেই। আবার ভেবে বসিয়েন না, আমরা তাঁদের বের করে দিয়েছি। তাঁরাই কেন্দ্রেই আসেননি।’
নেকমরদের আলিমুদ্দিন সরকারি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ৩ হাজার ১৭টি ভোট আছে। সেখানে ১০টি কক্ষে এই ভোট নেওয়া হয়। ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তিতুমীর রহমান বলেন, সকাল থেকে তিনি এজেন্টদের ফরম সংগ্রহ করছিলেন। এখানে অন্য সব প্রতীকের এজেন্টরা এলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর এজেন্টরা আসেননি। সকালে নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোট দিতে এখানে এসেছিলেন। এখানে যে তাঁর পোলিং এজেন্ট নেই, সে সময় তাঁকে জানানো হয়েছে। তিনি বিষয়টি দেখছেন বলে চলে যান। শেষ পর্যন্ত তাঁর কোনো পোলিং এজেন্ট পাওয়া যায়নি।
জে কোকিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পাঁচটি কক্ষ আছে। পাঁচটি কক্ষেই পোলিং এজেন্ট থাকার কথা থাকলেও সেখানে কেবল দুটি কক্ষে মংলু রাম ও গোপাল রায়কে পাওয়া যায়। আর দুর্ল্লভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ঘনশ্যাম রায় জানান, কেন্দ্রের পাঁচটি কক্ষের মধ্যে নৌকার তিনটি কেন্দ্রে এজেন্ট দেওয়া হয়েছে।
নেকমরদ বঙ্গবন্ধু মহাবিদ্যালয় কেন্দ্রের নয়টি কক্ষে কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট থাকা নিয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মদন মোহন রায়ের সঙ্গে কথা হয়। সে সময় তিনি তাঁর কেন্দ্রে নৌকার পোলিং এজেন্ট নেই—এটা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। পরে খোঁজ নিয়ে এর সত্যতা পান তিনি।
চন্দনচহট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ছয়টি কক্ষে নৌকার পোলিং এজেন্ট হিসেবে একজন নারী ও একজন পুরুষকে পাওয়া গেছে। একটি কক্ষে দায়িত্ব পালনে থাকা রুমানা বেগম বলেন, ‘অন্য সব কক্ষে পোলিং এজেন্ট নেই কেন, বলতে পারি না। আমাকে থাকতে বলেছে, আমি আছি।’
বেলা আড়াইটার দিকে জে কোকিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুর্লভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে নৌকার পোলিং এজেন্টের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হামিদুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছেন, এটা দলের লোকজন মেনে নিতে পারেননি। উপজেলা আওয়ামী লীগ তো অবশ্যই, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে নেতা-কর্মীদের নামিয়েছেন। এ কারণে দু-একজন ছাড়া কেউ তাঁর এজেন্ট হতে সাহস করেননি।
রানীশংকৈল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সইদুল হক বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি। কিন্তু হামিদুর রহমানের পক্ষে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কেউ কাজ করতে রাজি হননি।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মু. সাদেক কুরাইশী বলেন, ‘জেলা ও উপজেলা থেকে আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি। মাঠ গোছানোর জন্য আমরা কাজ করেছি। কিন্তু তিনিই নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেননি। এতে যা হওয়ার, তা-ই হয়েছে।’
এই ২নং নেকমরদ ইউনিয়নে আ'লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল হোসেন মাস্টার ৮৪১৮ ভোটে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ডা.হামিদুর রহমান নৌকা প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ২৪৭ ভোট।
নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, রাণীশংকৈল উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ২২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।
নির্বাচন অফিসের সূত্রে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী রাণীশংকৈল উপজেলার অন্যান্য ৪টি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীরা জয়ী লাভ করেন। তারা হলেন ১নং-ধর্মগড় ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী আবুল কাশেম, ৩নং-লেহেম্বা ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম, ৪নং-কাশিপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী আতিকুর রহমান বকুল এবং ৫ নং-রাতোর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী বাবু শরৎ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: