কুমিল্লাসহ দেশের কয়েকটি জেলায় গত ৯ বছরে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর ৩ হাজার ৬৭৯টি হামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৫৯টি বাড়িঘর ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। এই সময়ে হিন্দুদের ৪৪২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। প্রতিমা, পূজামণ্ডপ, মন্দিরে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৬৭৮টি। এসব হামলায় আহত হয়েছে ৮৬২ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। নিহত হয়েছে ১১ জন।
এর বাইরেও ২০১৪ সালে দুজন হিন্দু নারী ধর্ষণের শিকার হন। শ্লীলতাহানি করা হয় আরও চারজনের। এছাড়া ২০১৬, ২০১৭ ও ২০২০ সালে ১০টি হিন্দু পরিবারকে জমি ও বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে দখলের অভিযোগ ওঠে।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যানে এসব তথ্য জানা গেছে। সংস্থাটি প্রতিবছরই মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি প্রতিবেদন দেয়। ২০১৩ সাল থেকে হিন্দুসহ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপর হামলার ঘটনাগুলোও তারা প্রতিবেদনে আলাদাভাবে দিয়ে আসছে।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে আসক নয় বছরে হিন্দুদের উপর সাড়ে ৩ হাজারের বেশি হামলার তথ্য দিলেওবাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত দাবি করছেন প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে বেশি।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের দাবি দুর্গাপূজার মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লার একটি মণ্ডপে কুরআন অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে বেশ কয়েকটি মণ্ডপ ও স্থাপনা ভাংচুরের পর তার জের ধরে তিন দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৭০টি পূজামণ্ডপে হামলা-ভাঙচুর-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
আসকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ডট কম দেখিয়েছে, গত নয় বছরে হিন্দুদের উপর সবচেয়ে বেশি হামলা হয়েছে ২০১৪ সালে।
ওই বছরের ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন হয়েছিল। এর পরবর্তী সহিংসতার শিকার হন হিন্দুরা। ৭৬১টি হিন্দু বাড়ি-ঘর, ১৯৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ২৪৭টি মন্দির-মণ্ডপে হামলা হয় ওই বছর। তখন নিহত হন একজন।
সবচেয়ে কম হামলা হয়েছে ২০২০ সালে। অতিমারি করোনাভাইরাসের মধ্যে গত বছর ১১টি বাড়ি ও ৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার তথ্য রয়েছে আসকের প্রতিবেদনে। তবে মন্দিরে হামলা হয়েছে ৬৭টি।
তথ্য ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হিন্দু খুন হয়েছে ২০১৬ সালে, মোট সাতজন। এসব হত্যাকাণ্ডের অনেকগুলো ‘জঙ্গি হামলা’ বলে পরে জানিয়েছে পুলিশ।
হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা বলেন, “আইন ও সালিশ কেন্দ্র থেকে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে এর চেয়ে আরও অনেক বেশি হামলা হয়েছে। গত ১৩ বছরে হিন্দু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে কয়েক হাজার।
জাতীয় পার্টি, বিএনপির আমলে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “১৯৯০ সাল এরশাদের আমলে তিন দিন, ১৯৯২ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পর ২৭ দিন এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের পুরো আমলজুড়ে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে।
এই ধারার কারণ বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ তৈরি হয়েছিল বাঙালিত্বের ধারণা থেকে। এই ধারণা থেকে বাংলাদেশ অনেক সরে এসেছে। সংবিধানকে সাম্প্রদায়িকীকরণ করা হয়েছে। এই সংবিধান সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উৎসাহিত করছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: