বরিশালে মধ্যরাতের ঘটনার পর সদর উপজেলা পরিষদ কাউন্সিলসহ আশপাশের এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ মধ্যরাতে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর ছেলে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, ঘটনার অবশ্যই জোড়ালো তদন্ত চাইব। অবশ্যই আমরা আইনের আশ্রয় নেবো। মেয়র হিসেবে এভাবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। আমি মেয়র হিসেবে তাহলে ব্যর্থ! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে শপথ পড়িয়েছেন। আমার বাবা আছেন, তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। যদি আমার অপরাধ হয়ে থাকে, আমি আমার রেজিগনেশন লেটার দিয়ে দেবো।
ঘটনার বিবরণে তিনি বলেন, যে কাজ করতে গিয়ে এ ঘটনা, ওই কাজটি আমাদের রেগুলার কাজ। আপনারা ছিলেন, সংবাদ সম্মেলনে আগেই আমি ব্যানার নিয়ে স্টেটমেন্ট দিয়েছি, পুরোনো ব্যানার বা ভূইফোর সংগঠনের ব্যানারগুলো সরিয়ে ফেলতে। এতে শহর পরিষ্কার হবে। আর আপনারা জানেন মনে হয়, আমার নিজের করা ব্যানারটিও আমি খুলে ফেলেছি।
আর সেই ধারাবাহিকতায় পরিষ্কার করতে করতে তারা থানা কাউন্সিলে গিয়েছে। আপনারা দেখেছেন থানা কাউন্সিলের ভেতরে বিভিন্ন লোকজন, বিভিন্ন ব্যানার দেয়। আর যেখানে সিটি করপোরেশনের লোকজন কাজ করছিল সেটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসা নয়। ওখানে পুকুর আছে, যেখানে সাধারণ মানুষ গোসল করে। ওখানে মসজিদ আছে। ওখানে আরো অনেক অফিস আছে, ওখান থেকে পেছনে বসবাসকারী মানুষদের যাতায়াতের রাস্তাও রয়েছে।
সিটি করপোরেশনের কর্মীরা আমাকে যেটা জানিয়েছেন, ওখানে কাজ প্রায় শেষের পথে ছিল, পরিষ্কার করে চলে আসবে তখন ইউএনও সাহেব বের হয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মীদের বলেছেন, কার কাছে জিজ্ঞাসা করে সেখানে তারা গিয়েছে। কর্মীরা বলেছে, তাদের গালাগালি করা হয়েছে। আর এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওনার বাসায় হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু ওনার বাসার গেটের ভেতরে কি তারা ঢুকেছে? ওখানে আমাদের ১ নম্বর যুগ্ম সম্পাদক ছিল, তারপর প্রচার সম্পাদকের সাথে সিনিয়রদের পাঠালাম সেখানে কী হয়েছে দেখার জন্য।
তিনি বলেন, যখন তারা আমাকে বললো যে গুলি হচ্ছে, তখন বাসায় আমি। আমাদের সিটি করপোরেশনের সিও, মহানগর আওয়ামী লীগের অনেক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। আমি তাৎক্ষণিক একাই ঘটনাস্থলে চলে গেলাম। সিও সাহেবও পেছনে পেছনে রওনা দিলেন। আমি যখন ঘটনাস্থলে গিয়ে হেলমেট খুলে কর্মীদের বললাম তোমরা গেটের বাইরেই দাঁড়াও, কেউ ভেতরে যেও না। এরপর একা থানা কাউন্সিলের গেট দিয়ে যখন ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করলাম এবং বললাম, আমি বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র। তারা এ কথা শুনে, অনবরত গুলি করা শুরু করলো। এর মধ্যে পেছনে যে নেতা-কর্মীরা ছিল, তারা সকলে এসে মানবপ্রাচীর বানিয়ে আমাকে বাইরে নিয়ে এলো। তারপর ওখানে থেকে আমার খুবই খারাপ লাগছে, খুবই লজ্জা লাগছে। তাই আমি ওখান থেকে চলে আসছি। চলে আসার পর শুনলাম আবারো গুলি হয়েছে। আমাদের প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটুকে রেখে আসছিলাম, যাতে ওখানে অপ্রীতীকর কিছু না হয়।
মেয়র আরো বলেন, আমি গুলিবিদ্ধ হইনি। তবে আমাকে গুলি করা হয়েছে। আর এগুলো আমার জ্যাকেটের কারণে শরীরের ভেতরে লাগেনি। কিন্তু গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছি। আর গুলির সময় নেতাকর্মীরা সামনে চলে আসায় তাদের গায়েই গুলিগুলো লেগেছে। কতজনের গায়ে লেগেছে তা আমি হিসেব করে বলতে পারবো না। কতজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন এ বিষয়ে এখন কিছু বলতে পারবো না।
কোনো নেতার ব্যানারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটতে পারে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, কী বলবো বলেন, গুলি করা হয়েছে ওখানে। মেয়রের গায়েও পর্যন্ত গুলি করা হয়েছে।
মেয়র বলেন, আমি ওখানে যাওয়ার পর পুলিশ কমিশনার সাহেব, র্যাবের সিও, আনসাররা গুলি করায় আনসারদের প্রধানকেও ফোন করেছি। কিন্তু আমি চলে আসার পর পুলিশ বের হয়ে আসার পরও আবারো নাকি গুলি হয়েছে। মহানগর আওয়ামী লীগের এক নম্বর যুগ্ম সম্পাদককে যেহেতু আটকে রাখা হয়েছে, তাই হয়তো প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু আলোচনার জন্য ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাকে গুলি করা হয়েছে, ৩৫-৩৭টি শটগানের গুলির পিলেট তার গায়েও লেগেছে।
বরিশালের মেয়র বলেন, আমাদের সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস ব্যানার উচ্ছেদের সময় থেকেই ওখানে ছিল। তার গায়েও গুলি লাগছে।
তিনি আরো বলেন, আপনার (ইউএনও) সাথে (কর্মীদের) কথা কাটাকাটি হয়ে থাকলে আমাকে বলতে পারতেন। বরিশালে এত বছরে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে এভাবে আমাদের গুলি করা লাগবে। আবার শুনলাম, যারা আহত হয়েছে তাদের গ্রেফতার করার জন্য মেডিক্যালে গেছে। তাহলে ঠিক আছে, অপরাধ হয়ে থাকলে তাদের হয়নি। আমি মেয়র মাথা পেতে নিলাম। আমি রেজিগনেশন লেটার প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিয়ে দেবো।
এ ধরনের ঘটনার পেছনে কোনো কারণ আছে কি না তা জানতে চাইলে মেয়র বলেন, আমি সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব পালন করছি। আমাদের প্রশাসনের কাছে যেতে হয় না। আমরাই স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমাদের নিজেদের ইনকাম-বাজেট থেকে চলার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশের যে কয়টি সিটি করপোরেশন আছে, তার মধ্যে বরিশাল সিটি করপোরেশন দুর্নীতিমুক্ত। এটাও চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি। সরকারি অনুদান না পেয়েও আমাদের বেতন-ভাতা সব চলমান। পাঁচ বছরের গ্যারান্টি দিয়ে রাস্তা করতেছি। আর এগুলাই কারো যদি চোখের শূল হয় তাহলে আমি কী করবো।
সবশেষে তিনি বলেন, কর্মকর্কতা-কর্মচারী ও নেতাকর্মীদের চিকিৎসার খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। অনেককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে আমার মন খারাপ হয়ে যাওয়ায় আমি বাসায় চলে আসি। তারপরও অনেকে বলে আমার মাথা গরম, মাথা গরম হলে তো ওই জায়গায় অনেক কিছু হতে পারতো।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: