ঠাকুরগাঁও জেলার হরিহরপুর সিরাজপাড়া গ্রামের কৃষক বজলুর রহমানের ছেলে রাসেল। দরিদ্র কৃষক পরিবারের এই ছেলে মাত্র ১৮ বছর বয়সে এক পায়ে দড়ি লাফানো খেলায় (স্কিপিং রোপে) গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড-এ নাম লিখিয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্য।
মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে ১শ’ ৪৫ বার ও এক মিনিটে ২শ’ ৫৮ বার এক পায়ে দড়ি লাফিয়ে গিনেস রেকর্ড গড়ে মানুষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সে। এতে প্রশংসায় ভাসছে রাসেল। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে অনেকেই আসছে রাসেলকে দেখতে ও সাধুবাদ জানাতে।
এক পায়ে ৩০ সেকেন্ড স্কিপিং রোপে ১৪৪ বার লাফানোর বিশ্ব রেকর্ড থাকলেও রাসেল করেছে ১৪৫ বার। আরে এক মিনিটে এক পায়ে ২৫৬ বার লাফানোর বিশ্ব রেকর্ড থাকলেও সেই রেকর্ড ভেঙে লাফিয়েছে ২৫৮ বার।
রাসেল ঠাকুরগাঁও শিবগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের মানবিক বিভাগের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র। স্কুল জীবন ২০১৭ সাল থেকেই স্কিপিং রোপ খেলা শুরু তার। এক সময় জেলা থেকে বিভাগ পর্যায়ে স্কিপিং রোপে প্রথম হয় সে। বিভাগ থেকে জাতীয় পর্যায়ে স্কিপিং রোপে অংশগ্রহণ করলেও অনাবশ্যক কারণে তাকে বাতিল করা হয়।
তখন থেকেই সে প্রতিজ্ঞা করে, একদিন এই খেলা নিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার। সেই থেকে বাসার আশপাশে বিভিন্ন সড়কের ধারে যখন যেখানে সময় পেয়েছে সেখানেই স্কিপিং রোপের চর্চা করেছে সে। অবশেষে, নিজেকে এই খেলায় পরিপূর্ণ মনে হলে ২০১৯ সালে অনলাইনের মাধ্যমে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে আবেদন করে রাসেল। স্কিপিং রোপে এক পায়ের ওপর দুটি বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করে সে। একটি ৩০ সেকেন্ডের অন্যটি এক মিনিটের।
আবেদনের তিন মাস পর গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড থেকে কিছু গাইডলাইনসহ একটি রিপ্লাই পায় রাসেল। সেখানে তারা তাদের নিয়ম মতো কিছু ভিডিও চায় তার কাছে। সেই সঙ্গে কীভাবে সেগুলো করতে হবে তারও বিস্তারিত দেওয়া হয়। এরপর কিছুদিন আরও মনোযোগ দিয়ে চর্চা করে সেই ভিডিওগুলো তাদের পাঠায় রাসেল।
অবশেষে বিশ্ব রেকর্ড ভেঙে একটি নতুন রেকর্ড গড়ে রাসেল। প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ ডাক যোগের মাধ্যমে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড-এর দুটি সনদপত্র (সার্টিফিকেট) গত বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) পায় বলে জানায় রাসেল।
তার লক্ষ্য এখন সাউথ এশিয়ান গেমস ও আন্তর্জাতিকভাবে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে খেলায় অংশগ্রহণ করা।
এ নিয়ে রাসেলের পিতা বজলুর রহমান বলেন, একজন গরিব কৃষক হয়েও যথাসাধ্য আমার ছেলেকে সহযোগিতা করেছি। আমার ছেলে আজকে এমন একপর্যায়ে গেছে, আমার খুব ভালো লাগছে।
রাসেলের বড় ভাই আরিফ জানান, আমার ছোট ভাই রাসেল এতো বড় কিছু অর্জন করবে, আমরা বিশ্বাস করতে পারিনি সে বিশ্ব রেকর্ড গড়বে। আমরা গরিব হওয়ায় তাকে তেমন আর্থিক সহযোগিতা করতে পারিনি। সে নিজে নিজেই এত দূর এগিয়ে গেছে। আশা করি, সে আরও ভালো কিছু করবে।
এ ছাড়াও, তার প্রতিবেশী ও বন্ধু বান্ধবীরা জানায়, সে ছোটবেলা থেকেই খেলার প্রতি আসক্ত ছিল। তার স্বপ্ন ছিল একদিন বড় কিছু করবে। সেই সাফল্য অর্জন হয়েছে তার।
জেলা প্রশাসক জানান, গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড একটি সম্মানজনক অর্জন। আমাদের বাংলাদেশের জন্য এটি গৌরবের। আমি তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি ও শুভ কামনা করছি। ভবিষ্যতেও সে নতুন নতুন রেকর্ড গড়ুক এই কামনা করছি।
এ ছাড়াও, পৃষ্ঠপোষকতার জন্য তার কোনো প্রয়োজন হলে তাকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: