বর্তমান সমাজে একটা কথা অনেক প্রচলিত আছে, ‘বিপদের সময় কেউকে পাশে পাওয়া যায় না’ তবে সেই প্রচলিত প্রবাদকে ভুল প্রমান করতে চলেছে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার কিছু তরুণ। তাই করোনাকালীন এই দুঃসময়ে যেখানে পরিবারের সদস্যরাই আক্রান্ত ব্যক্তির পাশে থাকছেন না সেখানে একদল তরুন এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটে বেড়াচ্ছে জরুরী সেবা দেয়ার জন্যে।
সাম্প্রতিক সময়ে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তদের মধ্যে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে এই অবস্থায় অক্সিজেন সরবরাহ জরুরী হয়ে পড়লেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষেরা তাৎক্ষণিক হাসপাতাল বা অক্সিজেন সেবার আওতায় আসতে পারে না নানান সীমাবদ্ধতার কারনে।
তাই করোনাকালীন এই দুঃসময়ে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলাবাসীর প্রয়োজনে স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে জরুরী অক্সিজেন সেবা দিতে একদল তরুণের উদ্যোগে চালু করা হয়েছে মধুমতি অক্সিজেন ব্যাংক।
তবে, এখন এই স্বেচ্ছাসেবী উদ্যোগটি এখন আর শুধুমাত্র অক্সিজেন সেবায় সীমাবদ্ধ নেই। স্বেচ্ছাসেবক এই সংগঠনটি খবর পেলেই জরুরী মেডিসিন ও খাদ্যসেবাও পৌছে দিচ্ছে বিপদগ্রস্থের বাড়িতে। এলাকার বিভিন্ন পেশার মানুষ এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সব ধরনের সহায়তা প্রদানের চেষ্টা করছে।
সংগঠনের সদস্যরা জানান, করোনাকালীন সময়ে অনেক শ্রেনী ও পেশার মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ফলে ঝুঁকি নিয়ে হলেও মানুষ জীবিকার তাগিদে বের হতে বাধ্য হয়েছে। তবে, বর্তমানে করোনায় শ্বাসকষ্ট ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাওয়ায় অক্সিজেনের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে গ্রামাঞ্চলে চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেনের সরবরাহ পর্যাপ্ত না থাকা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষেরা এই সেবা নিতে না পারায় এটি একটি আতংকের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। এরই মধ্যে কাশিয়ানী উপজেলার সদর ইউনিয়নের বরাশুর গ্রামের বাসীন্দা ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি জামাল আল নাসের শামিল অক্সিজেন ব্যাংক করার আগ্রহ প্রকাশ এবং সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়ে নিজের ফেসবুক ওয়ালে একটি পোষ্ট দেন। মূলত এখান থেকেই এই স্বেচ্ছাসেবী উদ্যোগের যাত্রা শুরু।
সংগঠনের রিয়াজ আহমেদ সজল জানান,এখন কাশিয়ানী উপজেলায় রাতইল নিবাসী পরশ উজিরের তত্ত্বাবধানে স্বেচ্ছাসেবী দলটি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও জরুরী মেডিসিন সরবরাহের কাজ করছে। ঢাকার শান্তিনগরে এই সংগঠনের জন্যে একটি অস্থায়ী অফিস করা হয়েছে যা বরাশুর গ্রামের শেখ আনিসুর রহমানের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। জামাল আল নাসের শামিল সামগ্রীকভাবে সমন্বয়, ফান্ড সংগ্রহ ও তত্ত্বাবধানের কাজ করছেন।
এই উদ্যোগের ব্যাপারে জামাল আর নাসের শামিল বলেন, করোনা পরিস্থিরির শুরু থেকেই বিপদগ্রস্থের জন্যে সরকারের পক্ষ থেকে খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানও নানান ভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তবে বর্তমান সময়ে শ্বাসকষ্টের হার বৃদ্ধি পাওয়া নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে সংবাদ দেখতে পেয়ে একজন ব্যক্তি হিসাবে অনেকটা সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন এলাকার তরুনেরা স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে শ্রম দিচ্ছে। বিভিন্ন পেশার মানুষেরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে ও অনেকেই সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। আসলে সকলে মিলে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেই আমরা এই জরুরী মুহুর্তে কাশিয়ানীবাসীর অক্সিজেনের চাহিদা বিনামূল্যে পূরন করতে পারবো বলে আশাবাদী।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: