নওগাঁয় প্রশাসনের অভিযানের পরও থামছে না মাটি ব্যবসায়ীরা। মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে দু’একটি জরিমানাকে তারা তুচ্ছ মনে করে তিন ফসলী ও দু ফসলী জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছে যার ফলে নওগাঁতে দিন দিন কমছে আবাদী জমি বাড়ছে পুকুর। নওগাঁ জেলা সদর উপজেলার বলিহার ইউনিয়ন পল্লী এলাকা পাকুড়িয়া গ্রামের মাঠে আনুমানিক ১৫-১৬ বিঘা আবাদী জমিতে চলছে প্রকাশ্যে পুকুর খনন।
এলাকাবাসী জানান, জৈনক সিরাজ নামে একজন মাটি ব্যবসায়ী ঐ আবাদী জমিতে পুকুর খনন করে সেই মাটি ড্রাম ট্রাক যোগে পার্শ্ববর্তী মহাদেবপুর উপজেলার ভীরপুর ইউনিয়নের তেজপাইন টু নওহাটামোড় (চেংকুড়িমোড়) হয়ে মেইন সড়ক নওগাঁ টু রাজশাহী সড়কদিয়ে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করছে মাটি, গ্রামীন সড়ক নষ্ট সহ জেলার মূল সড়ক ব্যবহার করে আবাদী জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করার পরও প্রশাসন এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলেও জানিয়েছেন স্থানিয় ও রাস্তাদিয়ে চলাচল রত ভুক্তভোগীরা। নওগাঁয় অপরিকল্পিত ভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষি জমিতে পুকুর খননের কাজ। আর সরকারি নিয়মনীতি অমান্য অর্থাৎ জমির শ্রেণি পরিবর্তন না করেই ৩ বা ২ ফসলী আবাদী জমিতে অপরিকল্পিত ভাবে চলছে পুকুর খনন। যার কারনে আশঙ্কাজনক হারে কমছে কৃষি (আবাদী) জমির পরিমাণ। এমন চিত্র নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় রাস্তার ধারে আবাদী জমি খনন করে পরিনিত করা হচ্ছে পুকুরে। নিয়ম না মেনে রাণীনগর উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক সহ গ্রামীণ পাকা সড়কের উপর দিয়ে ট্রাক্টরের মাধ্যমে মাটি বহণ করার কারনে নষ্ট হচ্ছে সড়ক। এমন দৃশ্য এখন উপজেলার অধিকাংশ স্থানেই। আর পাকা সড়কের উপর মাটি পড়ে থাকার কারণে প্রতিনিয়তই ঘটছে দূর্ঘটনা।
প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমিতে দেদারছে মাটি কাটা হচ্ছে। অনুমোদন ছাড়াই টপসয়েল কেটে নিয়ে যাচ্ছেন মাটি ব্যবসায়ীরা। আবার কেউ স্বল্পমূল্যে মাছ চাষের কথা বলে শ্রেণি পরিবর্তন না করেই পুনঃখননের অজুহাত দিয়ে বড় বড় পুকুর কাটছে। জমিতে একের পর এক এক্সেভেটর (ভেকু) মেশিন দিয়ে মাটি কাটছেন নির্বিঘ্নে। অনেক কে ম্যানেজ করেই নাকি মাটি কাটছেন তারা। আবার গভীর রাতে মাটি কেটে ট্রাকভর্তি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব মাটি পরিবহনের কাজে নিয়োজিত রয়েছে অন্তত শতাধিক ট্রাক ও ট্রাক্টর। রাণীনগর উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়ন এর বিভিন্ন গ্রামে প্রতিদিন এমন চিত্র এলাকাবাসীর চোখে পড়লেও প্রশাসনের নজরে আসছে না।
এদিকে খোলা অবস্থায় ট্রাক্টরে করে মাটি পরিবহন করা হচ্ছে। ফলে সড়কে পড়ছে মাটি। এতে নষ্ট হচ্ছে স্থানীয় সড়ক
আর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসী বা পথচারীদের। কৃষি পণ্য উৎপাদনে এ নওগাঁর সুনাম দেশজড়ে থাকলেও প্রতি বছরই শুষ্ক মৌসুমে ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার ফলে দিন দিন কমছে কৃষি জমি।
একটি সুত্র জানান, ধান বা ফসল উৎপাদনের চেয়ে সল্প শ্রম বা ব্যায়ে মাছ চাষ লাভজনক এমনটাই এক শ্রেণীর সু-চতুর মাটি ব্যবসায়ীরা গ্রামের কৃষকদের বুঝিয়ে এমনকি ৩ বা ২ ফসলী জমিতে প্রথমে ছোট আকারে ডোবা বা কুড়ি খনন করার পর সেটিই পরবর্তীতে পুরাতন পুকুর সংস্কারের নামে বিশাল আকারে একের পর এক আবাদী জমি বড় বড় পুকুরে পরিনীত করছে। নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার বড়গাছা ইউনিয়নের মালশন গ্রামের মৃত দেওয়ান নওশাদুল হকের ছেলে আব্দুর রউফ ঠান্ডু ফসল না হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে জমির শ্রেণি পরিবর্তন না করেই মালশন মোড় সড়ক সংলগ্ন মাটিয়াল খনন করে পুকুর তৈরি করছেন। অথচ ওমরপুর মৌজার খতিয়ানে থাকা প্রায় ১বিঘা ঐ জমিটির শ্রেণি কৃষি জমি হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। জমির মাটি নেওয়ার শর্তে স্থানীয় একজন ঠান্ডুর ঐ জমি খনন করে পুকুর তৈরি করে দিচ্ছেন। আর ট্রাক্টরের মাধ্যমে গ্রামীণ সড়ক দিয়ে মাটিগুলো পরিবহন করে বিক্রি করছেন বিভিন্ন এলাকায়।
এদিকে ফসলি জমি ধ্বংস করা নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানছেন না প্রভাবশালীরা।
আবার অনেক কৃষক মাটি ব্যবসায়ীদের পাল্লায় পড়ে অপরিকল্পিত ভাবে ১ ফসলী, ২ ফসলী এবং ৩ ফসলী (আবাদী) জমীর শ্রেণি পরিবর্তন না করেই পুকুর খননের জন্য দিয়ে দিচ্ছেন। কৃষি জমি বাঁচাতে এবং গ্রামীণ সড়কগুলো চলাচলে নিরাপদ রাখতে এই ধরণের অবৈধ কর্মকান্ড দ্রুত রোধ করার জন্য প্রশাসনের জরুরীভাবে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলেই মনে করছেন সচেতন মহল।
জনপ্রিয় খবর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: