জীবিকার তাগিদে দই বিক্রিতে ব্যস্ত একুশে পদক প্রাপ্ত জিয়াউল

সময় ট্রিবিউন | ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ২০:৫২

জীবিকার তাগিদে দই বিক্রিতে ব্যস্ত একুশে পদক প্রাপ্ত জিয়াউল

চলতি বছর বিভিন্ন খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২১ নাগরিককে একুশে পদক ২০২৪ দিতে যাচ্ছে সরকার। তার মধ্যে সমাজসেবায় বিশেষ অবদান রাখায় একুশে পদক পেয়েছেন ‘বেচি দই, কিনি বই’ খ্যাত সাদা মনের মানুষ জিয়াউল হক।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার ৩ নম্বর দলদলী ইউনিয়নের চামা মুশরিভুজা গ্রামে বাড়ি জিয়াউল হকের। বাবার নাম মরহুম তৈয়ব আলী মোল্লা এবং মায়ের নাম শরীফুন নেছা।

বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নেন তিনি। এরপর ১৯৬৯ সাল থেকে একটু একটু করে গড়ে তোলেন তার পারিবারিক লাইব্রেরি। দরিদ্র্যতার সঙ্গে আজীবন লড়াই করেও নিরবচ্ছিন্নভাবে সমাজসেবা করে যাচ্ছেন জিয়াউল হক। ফেরি করে দই বিক্রি করে সংসার চালান তিনি, সেই আয়ের উদ্বৃত্ত টাকা দিয়েই বই কিনে গরিব ছাত্রদের মধ্যে বিলি করেন জিয়াউল।

গত মঙ্গলবার বিকেলে জিয়াউল হকের মনোনয়নের বিষয়টি প্রকাশ করে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়। বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জিয়াউল হক পাশের উপজেলা গোমস্তাপুরের সদর রহনপুর স্টেশন বাজারে দই বিক্রি করতে গেছেন। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর রহনপুর স্টেশন বাজারে গিয়ে একটি ওষুধের দোকানের সামনে তার দেখা পাওয়া যায়। ওদিকে তার বাড়িতে একুশে পদকের খবরে শুভাকাঙ্ক্ষীদের ভীড়।

ঘরে বাজার করার টাকা না থাকায় দই নিয়ে বের হয়েছেন বলে জানান তিনি। একুশে পদক পাওয়ার জন্য মনোনীত হওয়ায় শান্তি পেয়েছেন বলেও জানান তিনি। জীবনের শেষ দিকে এসেও কাজের স্বীকৃতি পাওয়ায় আনন্দিত তিনি।

সৎ মানুষ, ভালো দই ব্যবসায়ী ও ভালো মানের দই প্রস্তুতকারক হিসেবে তার সুনাম রয়েছে। সমাজসেবক হিসেবে তিনি অভাবগ্রস্ত মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যবই দেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় হাফেজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানায় পাঠ্যবই, পবিত্র কোরআন মাজিদ ও এতিমদের পোশাক দেওয়া অব্যাহত রেখেছেন।

এছাড়া যেসব ছাত্রছাত্রী দূরদূরান্ত থেকে বই নিতে আসেন, তাদের যাতায়াত খরচও দিয়ে থাকেন জিয়াউল হক। ঈদে গরিব-দুঃখীর মধ্যে কাপড় বিতরণ এবং প্রচণ্ড শীতে দরিদ্রদের মধ্যে শীতবস্ত্রও বিতরণ করেন।

একুশে পদকপ্রাপ্ত জিয়াউল হক জানান, কয়দিন বেঁচে আছেন পাঠাগারের দেখাশোনা করবেন তিনি। তারপর ছেলে এই পাঠাগারের দেখভাল করবে বলেও জানান তিনি।

তার ছেলে মহব্বত আলী বলেন, সমাজসেবা ক্যাটাগরিতে ২০২৪ সালে একুশে পদকে আমার বাবাকে মনোনীত করার জন্য আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমার বাবা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননায় মনোনীত হয়েছেন এতে আমি অত্যন্ত খুশি। আমি আমার বাবার অবর্তমানে এই পাঠাগারের হাল ধরব এবং সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


জনপ্রিয় খবর